বরিশাল
বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউনিয়া আবাসন প্রকল্পের ৬ কোটি টাকা উধাও
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউনিয়া আবাসন প্রকল্পে প্রায় ২৪০টি প্লটের বুকিং বাবদ গ্রাহকদের দেওয়া ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার কোনো হদিস নেই। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক মেয়রের সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে; অযোগ্য ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, জমা হওয়া কিস্তির টাকা মিলছে না এবং সরকারি হিসাবও অচল। ফলে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রকল্পের গ্রাহকরা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই প্রকল্পের কাজ স্থগিত রয়েছে এবং নতুন কিস্তি আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দুই দফা বরিশাল সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি সিটি করপোরেশনের স্বল্প আয়ের আবাসন প্রকল্পে ২৪০টি প্লট বরাদ্দ দেন। এই প্লটের জন্য নির্ধারিত ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা আইএফএসসি ব্যাংকে জমা পড়লেও তার কোনো হদিস মিলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বরিশাল নগরীর কাউনিয়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কাউনিয়া আবাসন প্রকল্পে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জমিগুলো এখন ‘শূন্য ও অবহেলিত’ অবস্থায় পড়ে আছে।
সিটি করপোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, অ্যাকাউনট্যান্ট যারা থাকেন, তাদের কিছু করার থাকে না। মৌখিকভাবে বলে দেওয়া হয় কাজটা করে নিয়ে এসো। তার পর যদি উনি কাজটা না করেন, তো কপালে যা হওয়ার সেইটাই হয়।
তিনি আরও বলেন, এই মেয়র সিটি করপোরেশনের ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা অপরাধে চাকরি থেকে সরিয়েছেন। সেই ঘটনা সর্বজন স্বীকৃত। পরে একজন মেয়র নিরপেক্ষ একটি তদন্ত কমিটি দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আবাসন প্রকল্পের বরাদ্দ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নেই। সিটি এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসিক জমির মালিক হওয়ার যোগ্য না থাকা সত্ত্বেও সাবেক মেয়র বিভিন্ন ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের বরাদ্দ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাদিক অনুসারী টুটুলকে ১৫ টা প্লট, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর, সাদিক অনুসারী মান্নাসহ নিজস্ব লোক দিয়ে সব প্লট নিজেই বরাদ্দ নিয়েছে। আমাদের এখানে মালিকানা জমিগুলোও তারা প্লটের ভিতরে নিয়েছে।
আরেক বলেন, আগের যে রাস্তা, সেই রাস্তাগুলোও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ভেতরের যারা বাসিন্দা, তারা যাতায়াতের জন্য সমস্যায় আছে। তারা বের হতে পারছে না।
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে হাইকোর্ট ২০২৩ সালে হাউজিং প্রকল্পের কাজে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তাই নতুন কিস্তির টাকা মিলছে না। প্রকল্পের ২৪০টি প্লটের মোট দাম ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের যে কিস্তিগুলো পাওয়ার কথা ছিল, সেগুলোও উঠছে না। অর্থাৎ সিটি করপোরেশনের একটি বিশাল অঙ্কের আয় এই মামলার জন্য বন্ধ আছে। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরে আমরা পরবর্তী সময়ে এই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হলো স্বচ্ছতা ও ন্যায় নিশ্চিত করা। এজন্য আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। যেকোনো নতুন বরাদ্দ বা কিস্তি কার্যক্রম শুধু মামলা নিষ্পত্তির পরই কার্যকর করা হবে।
স্থানীয়রা আশা করছেন, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে এবং প্রকল্পের টাকার হদিস নিশ্চিত করে কাজ পুনরায় শুরু করবে।