ভোলা
ভোলায় সক্ষমতার অর্ধেক গ্যাস উৎপাদন, সংকট কাটাতে সরকারের নতুন পরিকল্পনা
দেশের দক্ষিঞ্চালের দ্বীপজেলা ভোলায় আবিষ্কৃত তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের দুটিতে উৎপাদন শুরু হয়নি। আড়াই দশক আগে আবিষ্কৃত অন্য গ্যাসক্ষেত্রে এখন উৎপাদিত হচ্ছে সক্ষমতার অর্ধেক। সোয়া ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুত আছে এই জেলায়। চলমান জ্বালানিসংকটের মধ্যে ভোলার গ্যাস কাজে লাগাতে নতুন করে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই গ্যাস ব্যবহার করে ভোলাতেই শিল্পাঞ্চল গড়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, ভোলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিসিক, বড় উদ্যোক্তাদের নিয়ে শিল্পাঞ্চল ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) করার চিন্তা করছে সরকার। এর বাইরে একটি সার কারখানা নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে বড় বিনিয়োগ শুরু করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল। আরেক ব্যবসায়িক গোষ্ঠী শেলটেকও ভোলায় সিরামিক কারখানা স্থাপন করেছে। সেখানে উৎপাদন ২০১৯ সালে শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের ভোলা সফর করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভোলার গ্যাস ব্যবহার করা নিয়ে কয়েকটি বিকল্প রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস বাইরে নিয়ে আসা। ভোলা থেকে বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। বরিশাল থেকে ঢাকায় আনার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। চলতি মাসেই এ প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, এলএনজি করে জাহাজে নিয়ে আসা। এটির সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি। সিএনজি করে ঢাকায় আনা শুরু হয় গত সরকারের সময়ে। তবে যেটুকু আনার কথা, আসছে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
তাই এ তিনটির চেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে—ভোলার গ্যাস স্থানীয় পর্যায়ে কাজে লাগানো। ভোলার মানুষ বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগের দাবি জানিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরে। সরকার চাইছে, সেখানে শিল্প গড়ে তুলতে। বাসায় গ্যাস–সংযোগের চেয়েও এতে বেশি উপকৃত হবেন ভোলার মানুষ। এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। নদীপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা কাজে লাগাতে একটি নদী বন্দর করা যেতে পারে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোলার গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব রকমের চিন্তা করা হচ্ছে। তিন ধরনের শিল্প এলাকা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেসব শিল্পকারখানায় স্থানীয় মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভোলায় বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে কম দামে গ্যাস সরবরাহের চিন্তা করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা। পুরোনো কারখানায় ৩০ টাকা। ভোলায় নতুন শিল্পগ্রাহকদের প্রতি ইউনিট ৩০ টাকায় গ্যাস সরবরাহের চিন্তা করা হচ্ছে। এতে পেট্রোবাংলার ক্ষতি হবে না। তবে এর জন্য বিইআরসি থেকে অনুমোদন নিতে হবে। বর্তমানে ভোলার গ্যাস প্রতি ইউনিট ১৭ টাকায় কিনে সিএনজি করে ঢাকায় সরবরাহ করছে ইন্ট্রাকো।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, শিল্পের জন্য ভোলায় আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণে কোনো প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব এলে গণশুনানি করে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
ভোলায় ১৯৯৫ সালে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। শাহবাজপুর থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১৮ সালে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র ভোলা নর্থ এবং ২০২৩ সালে আবিষ্কৃত ইলিশা থেকে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি।
ভোলায় গ্যাস উৎপাদনের কাজটি করছে বাপেক্স; আর বাপেক্সের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভোক্তাপর্যায়ে তা সরবরাহ করে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি বলছে, বড় গ্রাহকদের মধ্যে এখানে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, দুটি ক্যাপটিভ (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ) ও একটি শিল্পকারখানা আছে।
ভোলায় গ্যাসের চাহিদা তেমন বাড়েনি। সিলিন্ডারে ভরে জেলার বাইরে গ্যাস নেওয়া শুরু হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। দিনে আনার কথা ৫০ লাখ ঘনফুট, আসছে ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ ঘনফুট।



