বরিশাল
বরিশালে ফুটপাতে পিঠা বিক্রেতা তন্নীকে আয়কর রিটার্নের নোটিশ!
অভাবের সংসারে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করেন গৃহবধূ তন্নী আক্তার (৩০)। তাঁকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে বরিশাল কর অঞ্চল অফিস। গত ১০ ডিসেম্বর দেওয়া নোটিশে তন্নীকে পরবর্তী ২২ দিনের মধ্যে কর অঞ্চল অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তন্নী বরিশাল নগরের বর্ধিত এলাকা কাশীপুর চৌমাথার গণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সরেজিন দেখা গেছে, গৃহবধূ তন্নী চৌমাথা বাজারে প্রতিদিন বিকেলে ফুটপাতে চিতই পিঠা বিক্রি করেন। পাশে বসে তাঁর মা বিক্রি করেন ভাপা পিঠা। তন্নীর স্বামী সুমন হাওলাদার একই বাজারে ভ্যানগাড়িতে স্বল্পমূল্যের পোশাক বিক্রির ব্যবসা করেন। পাশেই তাদের ঝুপড়ি ঘর।
সুমন জানান, চলতি মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে তাঁর স্ত্রীকে স্থানীয় ডাক অফিস থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, তাঁর একটি চিঠি আছে। তিনি গিয়ে স্ত্রীর চিঠিটি সংগ্রহ করেন। বাড়ি ফিরে এক কাকিকে দিয়ে চিঠি পড়ানো হয়। এতে তাদের মাথায় বজ্রপাতের মতো অবস্থা। তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আয়কর রিটার্ন শব্দগুলোর সঙ্গেই তারা পরিচিত ছিলেন না।
বরিশাল সার্কেল-১৪ এর সহকারী কর কমিশনার সালমা জাহান আঁখি স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, করদাতা হিসেবে তন্নীকে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখ সমাপ্ত বর্ষের রিটার্ন দাখিল করতে হবে। নোটিশ অনুসারে রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে কর আইন অনুযায়ী কর আরোপ ও দণ্ড আরোপের বিধান রয়েছে বলেও সতর্ক করা হয়।
তন্নী বলেন, প্রতিদিন পিঠা বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার। একটা সাপ্তাহিক ও একটা মাসিক কিস্তি দিই। কর কী জিনিস– এটাই জানি না।
তন্নী ও তাঁর মা চৌমাথা বাজারে একটি ওষুধের দোকানের সামনে বসে পিঠা বিক্রি করেন। দোকানি জাকির মাতুব্বর বলেন, ‘ওরা দিন আনে দিন খায়। শীত শুরুর পর এক মাস আগে পিঠা বিক্রি শুরু করেছে। ওদেরকে ভিক্ষা করে আয়কর দিতে হবে।’
তন্নীকে নোটিশদাতা সহকারী কর কমিশনার সালমা জাহান আঁখি বলেন, কারও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ই-টিআইএন খোলা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক। তন্নীর জাতীয় পরিচয়পত্রে ই-টিআইএন আছে বিধায় তাঁকে নোটিশ করা হয়েছে। তাঁর কোনো আপত্তি থাকলে উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন সাপেক্ষে ই-টিআইএন বাতিল করা হবে। তন্নী যোগাযোগ করলে কর অফিস এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
এ প্রসঙ্গে তন্নী বলেন, জমি নিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মামলা আছে। মামলার কাগজপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিয়েছি। সেটা ব্যবহার করে প্রতিপক্ষরা আমার নামে ই-টিআইএন করতে পারে।



