বরিশাল
ববিতে উৎসবহীন বিজয় দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংগীত নেই। নেই আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন। সাদামাটা আয়োজনেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। ১৬ ডিসেম্বরের সকালে এমন দৃশ্য ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন, ক্ষোভ আর হতাশা।
জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবের দিনের সূচনালগ্নেই প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগে বিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে একটি বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। কিন্তু শোভাযাত্রার আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন কিংবা অন্য কোনো প্রতীকী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন চোখে পড়েনি।
বিজয় দিবসের সকালটি কেটে যায় অনেকটা নীরবেই। দুপুরে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কমিটির উদ্যোগে মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল সীমিত। ক্যাম্পাসে ছিল না উৎসবের চেনা রং, সাজসজ্জা কিংবা আলোয় ভরা আবহ। আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজয়ভোজের ব্যবস্থা থাকলেও সামগ্রিক উদযাপন নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ। তাঁদের অভিযোগ, আগের বছরগুলোতে পতাকা উত্তোলন করে, বেলুন উড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন; আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচিতে মুখর থাকতো ক্যাম্পাস। এবার তার কিছুই দেখা যায়নি। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, আগে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণসহ নানা আয়োজন হতো। এবার কিছুই নেই।
সমালোচনার মুখে পড়ে পরে তড়িঘড়ি আলোকসজ্জা করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জাতীয় দিবসটি দায়সারাভাবে পালন করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ‘লিংকারস ইন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের একটি কমিউনিটিতে দেওয়া এক পোস্টে লেখা হয়, উপাচার্যের নিয়োগের প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বরং সাবেক উপাচার্য সূচিতা শারমিনের সময়েই মাঠ সংস্কার, হলচত্বর ভরাট, পিডি নিয়োগ এবং সড়ক ও টিএসসি চত্বরের কাজের টেন্ডার অনুমোদনের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পোস্টে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সসম্মানে পদত্যাগের আহ্বানও জানানো হয়। এদিকে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্মারক মহান বিজয় দিবসে ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ার পর ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে একাডেমিক ভবনে সীমিত পরিসরে আলোকসজ্জা করা হয়। তাতেও বিতর্ক থামেনি।
শিক্ষার্থীদের দাবি, আগে ১৫ ডিসেম্বর থেকেই পুরো ক্যাম্পাস আলোকসজ্জায় সজ্জিত থাকতো, যা চলতো ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবার শুধু বিজয় দিবসের সন্ধ্যার পর একাডেমিক ভবনে আলো জ্বালানো হয়েছে। বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির আহ্বায়ক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান কুমার রায়। উদযাপন ঘিরে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপ-কমিটির দায়িত্ব ছিল। কিন্তু কোনো কারণে হয়তো জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়নি। আলোকসজ্জা দুই দিনের ছিল। কিন্তু শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। তবে আগামীতে এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা হবে। সমালোচনার মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বিজয় দিবসের শেষভাগে এসে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, উদযাপন কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
তারা নির্ধারিত সময়ে কাজটি করতে পারেনি। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবসে এমন সীমিত, প্রতীকী আয়োজন কি কেবল সময়ের গাফিলতি। নাকি এর পেছনে রয়েছে প্রশাসনিক অগ্রাধিকারের গভীর অভাব। এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডর থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে।



