বরিশাল
ধর্ষণ মামলার বাদীকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ, হয়রানির বিচার চেয়ে আসামির সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের বানারীপাড়ায় দায়ের হওয়া একটি ধর্ষণ মামলার বাদীকে গত এক মাসের অধিক সময় ধরে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। এতে মামলার তদন্ত কার্যক্রমেও অগ্রগতি আসেনি। ফলে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত উভয় পক্ষই যথাযথ আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে- হয়রানি করতেই একজন ইউপি সদস্য ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা ধর্ষণের মামলায় ফাঁসিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলায় অভিযুক্ত মামুন ফরাজি। এমনকি সত্য সামনে আসার ভয়ে বাদীকেও পুলিশের সামনে আসতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মামলায় অভিযুক্ত মামুন ফরাজি। তিনি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের বচুয়া গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব ফরাজির ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর ভুক্তভোগী নারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি নালিশি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত নালিশি অভিযোগটি গ্রহণ করে তা এফআইআর করতে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন।
আদালতে দাখিল করা নালিশি দরখাস্তে ওই নারী উল্লেখ করেন, তিনি একজন অসহায়। পিতার মৃত্যুর পর মা অন্যত্র বিবাহ করায় চার বোন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবিকার তাগিদে তিনি বরিশাল শহরে ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
নালিশে বলা হয়, ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি দাদা বাড়ি বানারীপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে বরিশাল শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি হঠাৎ এসে তাকে জোরপূর্বক নিকটস্থ একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে। কিন্তু ভয়ে তিনি চিৎকার করতে পারেননি। একপর্যায়ে দু’জন পথচারীর কণ্ঠস্বর শুনে অভিযুক্ত ব্যক্তি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ওই দুই পথচারীর সহায়তায় অভিযুক্তের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, পরে তিনি বরিশালে এসে বোন ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে থানায় মামলা করতে গেলে নানা ব্যস্ততার কথা বলে মামলা গ্রহণ করা হয়নি। এ কারণে বাধ্য হয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।
তবে ধর্ষণের এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত মামুন ফরাজি। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সবুর খান ওরফে সবুর মেম্বার ও তার সহযোগিরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে মামুন ফরাজির বাবা মাহাবুব ফরাজি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে সবুর খানের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, ২০০ বছরের পুরোনো হিন্দু বাড়ি দখল, সরকারি ৯ একর জমির গাছ বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ, খেয়াঘাট দখল, ট্রলার লুট, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, থানায় পুলিশের সামনে ছাত্রপ্রতিনিধিদের ওপর হামলা, গরিবদের সরকারি সহায়তা আত্মসাৎ, স্কুল কমিটি দখল, প্রবাসীদের অর্থ আত্মসাৎ ও অটোরিকশা দিয়ে চাঁদা উত্তোলনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সবুর মেম্বারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ভুক্তভোগী মাহাবুব ফরাজির কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তার মালিকানাধীন দুটি ট্রলার ছিনতাইয়ের পর বিক্রি করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় তার ছেলে মামুন ফরাজি বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সবুর মেম্বার ডিগ্রি পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ দখল করেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগের পর তদন্ত করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ভুয়া সনদের সত্যতা পায় এবং তাকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সবুর মেম্বার ও তার সহযোগীরা গত ২৭ অক্টোবর একজন নারীকে ব্যবহার করে মামুন ফরাজির বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করায়। আদালতের নির্দেশে ১ নভেম্বর মামলাটি থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান ভুক্তভোগী মাহাবুব ও মামুন ফরাজি।
ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হোসেন বলেন, মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তদন্তে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বাদীর দেয়া মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এবং যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে, সেখানে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাদীকে পাওয়া গেলে তদন্ত এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।”
এদিকে অভিযুক্ত মামুনের বাবা অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি নেতা সবুর খানের দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। তাঁর দাবি, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁদের পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “সবুর খান ভুয়া সনদ দিয়ে একটি বিদ্যালয়ের সভাপতির পদে ছিলেন। এ বিষয়ে আমার ছেলে শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করলে তাঁকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এরপরই পরিকল্পিতভাবে এই ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন বাদীকে পাওয়া না যাওয়ায় আমরাও সঠিক আইনি সহায়তা পাচ্ছি না।



