ভোলা
ভোলায় চুরির অভিযোগে নারীর গলায় জুতার মালা দিয়ে হেনস্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোলার মনপুরা উপজেলায় অনৈতিক কাজে ব্যর্থ হয়ে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারীকে বেঁধে গলায় জুতার মালা দিয়ে এলাকায় ঘুরিয়ে হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় স্বপন মাঝি ওরফে স্বপন ডাকাতের লোকজনের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে এভাবে জনসম্মুখে নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর উপজেলার চর কলাতলি ইউনিয়নের কাজিরচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নারী ওই এলাকার সরকারি আবাসনে বসবাস করেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারীকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরানো হচ্ছে। তার পেছনে পেছনে এলাকার লোকজন দলবেঁধে হাঁটছে। উৎসুক লোকজনকে তার ভিডিও ধারণ করতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ, তার স্বামী প্রায় ১০ বছর আগে তাকে তিন সন্তানসহ ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। বর্তমানে তিনি ছোট ছেলেকে নিয়ে কাজিরচরের সরকারি আবাসনে থাকেন।
তার স্বামী না থাকায় স্থানীয় স্বপন ডাকাতের লোকজন তাকে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তিনি জানান, তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ঘটনার কয়েকদিন আগে স্বপন ডাকাতের এক লোক রাতে তার ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে তার চিৎকারে সে ঘর থেকে চলে যায়। এ ঘটনার পর বিষয়টি স্বপন ডাকাতকে জানানো হলে তিনি বিচার করে দেবেন বলে ঘুরাতে থকেন। এর কয়েকদিন পর ওই নারীকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে স্বপন ডাকাতের নির্দেশে লোকজন দিয়ে বেঁধে রেখে দিনভর নির্যাতন চালানো হয়। পরে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরানো হয়।
ভুক্তভোগী ওই নারীর বড় ছেলে জানান, তার মা ছোট ভাইকে নিয়ে চরের একটি আবাসনে থাকেন। ছোট ভাই আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তার মাকে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয় স্বপন ডাকাতের লোকজন। তারা অনৈতিক কাজ করতে না পেরে গত ১৩ অক্টোবর তার মাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরানো হয়। এমনকি তাকে এলাকা থেকে বের করে দিলে তিনি প্রায় এক মাস তজুমদ্দিনে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। এ ঘটনার পর স্বপন ডাকাতের ভয়ে তারা বিষয়টি কাউকে জানায়নি। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার কাজিরচর এলাকায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী স্বপন ডাকাতের ত্রাসে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই স্বপন ডাকাতের আসল বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বপন মাঝি ওরফে স্বপন ডাকাত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। ওই নারীকে আমি চিনিও না।’ মনপুরার কলাতলি চরের পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের। সে সময় কেউ একজন ভিডিও ধারণ করে সেটি বর্তমানে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। ওই সময় ভুক্তভোগী ওই নারী মৌখিকভাবে জানানোর পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ওই ঘটনায় স্বপন ডাকাতের ইন্ধন ছিল। তবে ওই নারীকে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে কিন্তু সে আর থানায় আসেনি।
এখনো যদি ভুক্তভোগী নারী লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, স্বপন তাকাতের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় ওয়ারেন্টও আছে। তবে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। কারণ দুর্গম চর হওয়ায় পুলিশ পৌঁছানোর আগেই সে পালিয়ে যায়।



