বরিশাল
বরিশালে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া সেই পাঁচ শিশু হাসপাতালে ভর্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিয়ের পাঁচ বছর অপেক্ষার পর সোহেল-লামিয়া দম্পতির কোলজুড়ে এক সঙ্গে জন্ম নিয়েছিল পাঁচ সন্তান। এ খবর শুধু সোহেল-লামিয়ার পরিবারেই নয়, আনন্দের ঢেউ তুলেছিল গোটা এলাকাজুড়ে। কিন্তু তাদের জন্মের পরের বাস্তবতা আরও গভীর এবং মানবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবার সামান্য আয় দিয়ে চলছে না পাঁচ সন্তানের ভরণ-পোষণ। এমনকি সঠিক পরিচর্যার অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে পাঁচ সন্তান। তাদের পাঁচজনকেই ভর্তি করা হয়েছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে অর্থাভাবে সন্তানদের সঠিক চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত পরিবারটি। তাই সরকার এবং সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত পেতেছেন অসহায় বাবা-মা।
চলতি বছরের গত ৬ অক্টোবর বরিশাল নগরীর ডায়াবেটিক হাসপাতালে কোনো প্রকার অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে তিন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান জন্ম দেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের সিংহেরকাঠি গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী সোহেল হাওলাদারের স্ত্রী লামিয়া আক্তার। পাঁচ সন্তানের নাম রাখা হয়েছে- হাসান, হোসাইন, মোয়াছিন, হাবিবা এবং উমামা।
জন্মের পর প্রায় দেড় মাস তাদের শারীরিক অবস্থায় ভালোই ছিল। তবে শীত শুরুর পর থেকেই একে একে পাঁচজনই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। সবশেষ গত ২২ নভেম্বর তাদের পাঁচজনকেই বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পাঁচ সন্তানের নানি শাহনাজ বেগম বলেন, পাঁচ সন্তানকে তাদের মা এবং আমি ছাড়া লালন-পালনের আর কেউ নেই। কষ্ট করে হলেও ভালোভাবে যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু শীত শুরুর পর পরই নাতি-নাতনিরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। একজন অসুস্থ হলে পরে দেখা যায় আরেকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার কারণে ওদের হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় মেটানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাঁচ শিশুর মা লামিয়া আক্তার বলেন, একটি সন্তান লালন-পালন করাই কষ্টকর। সেখানে আল্লাহতায়ালা আমাদের ৫টি সন্তান দিয়েছে। তাতে আমরা খুশি। কিন্তু ওদের পেছনে যে ব্যয় হচ্ছে তা আমার স্বামীর স্বল্প আয় দিয়ে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ শীতে ওদের গরম পোশাকের দরকার। প্রতিদিন ১০টির ওপরে ডায়াপার লাগে। এক কৌটা দুধ দুদিন যায় না। এমন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়ানো ছাড়া উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। সরকারিভাবে বা হৃদয়বান ব্যক্তিদের আমার সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।
পাঁচ সন্তানের বাবা মুদি ব্যবসায়ী সোহেল হাওলাদার বলেন, পাঁচ সন্তানের পেছনে বর্তমানে দৈনিক কমপক্ষে দুই হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। ওরা যত বড় হয় খবর তত বাড়ছে। কিন্তু আমাদের পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ নেই। অনেকে আসে, আশ্বাস দিয়ে যায় কিন্তু পরে আর খোঁজ নিচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি। তবে সন্তান হওয়ার পর বরিশাল সমাজসেবা অফিস এবং জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ কিছু খচর এবং একটি গাভী উপহার দিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর সরকারিভাবে তিনিই দুধ এবং কিছু ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সন্তানদের লালন-পালনের জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন অসহায় বাবা সোহেল হাওলাদার।
এদিকে, একসঙ্গে জন্ম নেওয়া পাঁচ সন্তানের অসুস্থতার খবর শুনে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে ছুটে যান বরিশাল জেলা সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক একেএম আখতারুজ্জামান তালুকদার ও সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ। তারা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল পরিচালকের সহযোগিতায় পাঁচ শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
‘ইভেন্ট-৮৪’ এর আহ্বায়ক বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, আমি চেষ্টা করেছি আমার সংগঠনের পক্ষে থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার। বাচ্চাগুলো জন্মের পরে ডায়াবেটিক হাসপাতালের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করেছি। পরে পাঁচ সন্তানকে একটি গাভি উপহার দিয়েছি। ভবিষ্যতেও যতটা সম্ভব আমরা তাদের পাশে থাকব।
বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক একেএম আখতারুজ্জামান তালুকদার বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ শিশুর চিকিৎসা সহায়তার জন্য আমরা বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাছাড়া তাদের জন্য কিছু দুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যা দিয়ে ১৫ দিন চলে যাবে। তবে তাদের জন্য স্থায়ী সহযোগিতা দরকার। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা ওদের পাশে দাঁড়ালে পরিবারটি যেমন স্বস্তি পাবে, তেমনি সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে সন্তানগুলো বেড়ে উঠতে পারবে।



