বরিশাল
অপরাধীদের অভয়াশ্রম বরিশাল বিসিক শিল্প নগরী!
নিজস্ব প্রতিবেদক : অপরাধ যেন পিছু ছাড়ছে না বরিশালের বিসিক শিল্প নগরী এলাকায়। যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন বেড়ে চলেছে অপরাধীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এ যেন দেখার কেউ নেই!
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিক শিল্প নগরীর বেঙ্গল বিস্কুটের ঠিক বিপরীতে ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট তৈরীর কারখানা এমইপির পিছন দিকে পুকুর পাড়ের সড়কে সকাল-সন্ধ্যা যেন মাদকের হাটবাজার। হাত বাড়ালেই মেলে গাঁজা ও সর্বনাশা ইয়াবার মত মাদক। এখানে সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক সেবন ও বিক্রি। বিসিক শিল্প নগরীতে রয়েছে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগ কাজ করে বিভিন্ন বয়সী নারীরা। নারীদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা অনেকটা কম বললেই চলে। আর এসব নারী-পুরুষ তাদের কর্মের জন্য যখন এসব রাস্তা ব্যবহার করে তখন তাদের পরতে হয় চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। নিরাপত্তাহীনতা ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও পরিবর্তন হয়নি এসব হীন কর্মকাণ্ডের। মাদক সেবন করে বিঘ্নিত মস্তিষ্কে মাদকসেবিরা বিভিন্ন অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে এখান থেকে চলাচল করা কর্মজীবি নারীদের সাথে। যার ফলে এসব কর্মজীবি নারীরা এখান থেকে চলাচল করতে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও মাঝে মাঝে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এসব মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের কারণে চলাচলে বিঘ্ন হয় যার ফলে বহু পুরুষকে হতে হয় হেনেস্তার স্বীকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী নারী জানান, এই সড়ক থেকে চলাচল করা খুবই অনিরাপদ। তিনি তার কর্মস্থলে যাওয়া এবং আসা এই সড়ক থেকেই করতেন কিন্তু তার সাথে একাধিকবার অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। তিনি যখনই ওই সড়ক ব্যবহার করতেন তখনই কোন না কোন মাদকসেবি কিংবা মাদক বিক্রেতা তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন। যা একজন নারীকে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে।
ভুক্তভোগী ওই নারী আরও জানান, শুধু তিনি নন তার মতো অনেক নারীই পরেছেন এমন বিব্রতকর ও ভয়ানক পরিস্থিতিতে। আর এই ভয়ানক ও বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে তিনি এখন ব্যবহার করেন অন্য রাস্তা।
এই সড়ক থেকে বের হয়ে ঠিক ডান দিকে রয়েছে দুটি সমিল। সারাদিন এই সমিলের কার্যক্রম চলার পরে বিকেলের দিকে যখন বন্ধ হয়ে যায় তখনই এখানে ঘাঁটি জমায় অন্য আরেকদল মাদকসেবী ও মাদকবিক্রেতারা। অনেকটা প্রকাশ্যই চলে মাদক সেবন ও বিক্রি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যেমন বিভিন্ন মানুষ আসে সমিলে গাছ সংক্রান্ত কাজের জন্য ঠিক তেমনই বিকেলের পরে আসে মাদক সংক্রান্ত ব্যাপারে।
এখান থেকে বের হয়ে পশ্চিম দিকে একটু বের হলেই মিলবে ধোপা বাড়ির মোড়। যায়গাটা খুবই নিরিবিলি। সন্ধ্যার পরে সেখানে প্রায়ই ঘটে ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য ঘটনা।
এরপর বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পিছন দিকটায় রয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে ছন ক্ষেত। আর এই বিশাল এলাকাজুড়ে ছন ক্ষেত যেন অপরাধীদের জন্য খুবই সুবিধার বিষয়। দিনের বেলায়ও এখানে একা গেলে গা ছমছমে পরিস্থিতি তাহলে অন্ধকার হলে এখানে কেমন পরিবেশ তৈরি হয় তা বলার ভাষা রাখে না। মাদক সেবন, মাদক বেচাকেনা ও ছেলে-মেয়েদের অশ্লীল কার্যক্রম এখানে চলে অহরহ। এমন নিরিবিলি পরিবেশ ই যেন অপরাধীদের জন্য সুখবর।
সর্বশেষ খানসন্স টেক্সটাইল মিলের সড়কে ঢুকলেই দেখা মেলে একঝাঁক কিশোর গ্যাংয়ের। এদের কাজ শুধু মাদক সেবন করা ও মেয়েদের ইভটিজিং করা। আর এসব কাজে বাঁধা দিলেই হতে হয় লাঞ্ছিত। তাই সাহস করে প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও পায় না কেউ। কারণ এই কিশোর গ্যাংয়ের ক্ষমতা যে অনেক, তাদের দলে রয়েছে বহু সদস্য। আর এ কারণেই প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না কেউ। যার ফলে সময়ের সাথে সাথে এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হয়ে উঠছে অত্যন্ত ভয়ংকর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এখান থেকে চলাচল করা খুবই অনিরাপদ ও ভয়ানক। এখানে অল্প বয়সী একদল ছেলেরা মাদক সেবন ও মেয়েদের দেখলে উশৃংখল আচরণ করে। এছাড়া এখান থেকে টেক্সটাইল মিলের মধ্যে মসজিদ রয়েছে সেখানে নামাজের সময় হলে মুসুল্লিরা যাতায়াত করে আর এই কিশোরদের জন্য মুসুল্লিদেরও ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
উল্লেখ্য, কাউনিয়া বিসিক শিল্প নগরীতে প্রায়ই মারামারি ও দেশীয় অস্ত্রসহ অনেককেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বলে যায়। আর এসব ঘটনার বেশিরভাগই ঘটে মাদক ও নারী সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। তাছাড়া প্রায়ই চুরির মতো ঘটনাও ঘটে বলে জানা গেছে। এছাড়াও কয়েক বছর আগে কচি মিয়ার বাগানে এক স্কুল ছাত্রকে হত্যাকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক ঘটনাও এখানে ঘটেছে।
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিক মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন আলম বলেন, আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি যাতে বিসিকের মধ্যে কোন রকম অন্যায় কিংবা অনিয়ম না হয়। কিন্তু তারপরেও বহিরাগতদের কারণে কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যা খুবই দুঃখজনক। এবং এসব অন্যায় কাজ বন্ধের জন্য আমরা আগের চেয়ে আরও কঠোর অবস্থানে যাবো। এছাড়াও তিনি এসব অন্যায় কাজ বন্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয় কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল নিশাত বলেন, বিসিক শিল্প নগরী বিশাল এরিয়া। এর ভিতর রয়েছে অনেক শুনশান যায়গা। যার ফলে অপরাধীদের অপরাধ করতে বাড়তি সুবিধা হয়। আমাদের পক্ষ থেকে আগের থেকে নজরদারি বাড়ানো হবে যাতে করে এসকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে সেদিকে বাড়তি খেয়াল রাখা হবে।