বরিশাল
অপসোনিনের ৫০০ শ্রমিক চাকরিচ্যুৎ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
অপসোনিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৫ শতাধিক কর্মচারীকে আকস্মিক চাকরিচ্যুৎ করা হয়েছে। তিনদিনের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়ে তাদের বাসায় চাকরিচ্যুতির নোটিস পৌছে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ চাকরি হারানোর ঘটনায় সংক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা টানা ৫দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার সকালেও চাকরিচ্যুৎ শ্রমিকেরা শহরের বগুড়া রোডস্থ প্রতিষ্ঠানটির সম্মুখ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে প্রতিবাদস্বরুপ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরাও অংশ নেয়। রোববারের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেধে দেওয়া হয়েছে, যদি এর মধ্যে শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা না হয়, তাহলে মহাসড়ক অবরোধ করাসহ আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
চাকরিচ্যুৎ আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানান, কোনো কারণ ছাড়াই স্টেরিপ্যাক বিভাগের শ্রমিকদের তিনদিনের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই ছুটির মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর প্রত্যেক শ্রমিকের বাসা-বাড়িতে চাকরিচ্যুতির নোটিস পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এমন অমানবিক আচরণ শ্রমিকদের হতাশাগ্রস্ত করে তোলার পাশাপাশি সংক্ষুব্ধ করেছে।
চাকরিচ্যুতির নোটির প্রাপ্তির একদিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা প্রতিবাদস্বরুপ বগুড়া রোডস্থ অপসোনিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছেন।
একাধিক শ্রমিকের অভিযোগ, স্টেরিপ্যাক বিভাগে কর্মরত ৫ শতাধিক শ্রমিকের প্রত্যেকের বেতন ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা ছিল। কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরিচ্যুৎ করে কম বেতনে কর্মী নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুরানো এবং দক্ষ শ্রমিকদের বরখাস্ত করেছে।
ছুটির মধ্যে ডাকযোগে নোটিস পাঠিয়ে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাসদ বরিশাল জেলা সমন্বয়কারী ডা. মনিষা চক্রবর্তী। গত শনিবার এবং রোববার চাকরিচ্যুৎ শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
বরিশালে দীর্ঘদিন শ্রমিকের অধিকার নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসা এই নারী নেত্রী বলেন, আকস্মিক চাকরিচ্যুতির নোটিস দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা অমানবিক আচরণের সামিল। এই ঘটনায় শ্রমিকেরা তাদের অধিকার রক্ষায় মাঠে নেমেছেন। এতে তিনিও সম্মতি জানিয়ে পাশে থাকার অভয় দিয়েছেন। যদি শিগগিরই শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল না করা হয়, তাহলে দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করাসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে অপসোনিনকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেধে দেওয়া হয়েছে।
আকস্মিক শ্রমিক ছাঁটাই এবং প্রতিবাদ আন্দোলন নিয়ে জানতে রোববার বিকেলে অপসোনিনের বরিশাল অফিসে ফোন করা হলে পারভেজ নামক জনৈক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করলেও তিনি মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে বিভিন্ন মাধ্যম জানা গেছে, বরিশালের এই প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমুর স্বজন আবদুস সবুর খানের। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। ধারনা করা হচ্ছে, আগামীদিনে প্রতিষ্ঠানটির খরচ কমাতে স্টেরিপ্যাক বিভাগের কর্মচারীদের বাদ দিয়ে কম বেতনে কর্মী নেওয়ার হতে পারে। অবশ্য এই এধরনের অভিযোগ চাকরিচ্যুৎ শ্রমিকেরাও মিডিয়ার কাছে তুলে ধরেছেন।’


