বরিশাল
১০ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালুর উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল মহানগরীতে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বেলতলা ও দপদপিয়া এলাকায় নির্মিত দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দীর্ঘ ১০ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। এটি চালু করতে বাড়তি ব্যয় হবে আরও সাত কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লান্ট দুটির অধিকাংশ মূল্যবান মালামাল অচল হয়ে গেছে, আবার অনেক যন্ত্রপাতি খোয়া গেছে। ইতিমধ্যে অচল প্লান্টগুলো সচলের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। নতুন করে সাত কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে প্লান্ট দুটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিসিসি। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া থেকে বরিশালকে রক্ষায় তারা নদীর পানি কাজে লাগানোর এই মাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন। মাটির নিচের পানির স্তর রক্ষায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে চালু করা হয়েছিল দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্মাণে দুটি প্লান্ট চলেছিল মাত্র ৮ মাস। তারপর অচল হয়ে যায় যন্ত্রপাতি।
বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, আমরা খুব তাড়াতাড়ি প্লান্ট দুটি চালু করব এবং নগরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করব। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ করেছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল। হস্তান্তরের সময় দেখা যায়, ১ কোটি ৬০ লাখ লিটারের পরিবর্তে পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫-৪০ লাখ লিটার। তাই আমরা নিতে অপারগতা জানাই। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলনে বরিশালে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১ সেন্টিমিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বরিশালকে বাঁচাতে আমরা প্লান্ট দুটি দ্রুত মেরামত করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছি।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, আমরা এতদিন ৩৮টি পাম্প দিয়ে ৩৬ হাজার গ্রাহককে পানি সরবরাহ করেছি। সবটাই জোগাড় হয়েছে ভূগর্ভ থেকে। এখন আমরা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজে হাত দিয়েছি। এটি চালু করলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অন্তত ৫০ ভাগ চাপ কমে যাবে। প্লান্ট থেকে সরবরাহ করা পানিতে নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে বিশুদ্ধ করা হবে। তাই এর ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে নগরী থেকে চর্মরোগসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। পাশাপাশি পানির স্তর নেমে যাওয়ার হুমকি থেকে নগববাসীকে রক্ষা করা যাবে। বিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ঈমাম বলেন, বরিশাল নগরীতে পানিবাহিত চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্লান্টের পানিতে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করায় পানির জীবাণুগুলো মারা যাবে। পানি বিশুদ্ধ করার সব প্রযুক্তি এখানে থাকছে। সম্পূর্ণ পরিশোধিত এমন পানি ব্যবহার করলে পানিবাহিত রোগ নির্মূল হয়ে যাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, নতুন করে কাজ করছেন কর্মীরা। তারা জানান, দীর্ঘ ১০ বছর বন্ধ থাকায় মূল্যবান প্রায় সব মালামাল অচল হয়ে গেছে।
অনেক মালামাল চুরি হয়ে গেছে। প্যানেল বোর্ড, মোটর, ক্যাবল, পাম্প এবং ফিল্টার খুঁজে পাওয়া যায়নি। নতুন জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে।
এক কর্মী বলেন, ১০ বছর অকেজো পড়ে থাকায় প্লান্ট দুটোর পুরো সিস্টেমই ফেইল করেছে। তারপরও আমরা কাজ করছি। নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ পানি সরবরাহ করা যাবে। সব কাজ শেষ হবে ডিসেম্বর নাগাদ।



