ঝালকাঠি
করোনায় কাজ হারিয়ে তারা এখন সফল উদ্যোক্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনাভাইরাস মহামারিতে কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তেমনই দুই যুবক ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার জাকিউর রহমান (নাসির) ও মো. কায়েম হোসেন। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাফল্য অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা। নাসিরের বাড়ি উপজেলার উত্তর সাউথপুর গ্রামে এবং কায়েম হোসেনের বাড়ি কৈবর্তখালী গ্রামে। জানাযায়, নাসির রাজধানীর একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতেন। আর একটি ওষুধ কোম্পানির জোনাল ম্যানেজার ছিলেন কায়েম।
কিন্তু করোনা মহামারিতে চাকরি হারান তারা। এরপর তারা উদ্যোগ নেন স্বাধীনভাবে কিছু একটা করার। অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে আধুনিক মাছ চাষ পদ্ধতিটি ভালো লাগে তাদের। এ পদ্ধতিতে স্বল্প জায়গায় ও স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক হিসেবে এ ব্যবসার উদ্যোগ নেন তারা। সে অনুযায়ী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ‘বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতেই কাজ শুরু করেন। নাসির ১৬ লাখ এবং কায়েম সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু করেন। তার দুজনই এখন সাফল্যে দ্বার প্রান্তে। আর মাত্র ১৫-২০ দিন পরেই মাছ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তারা। গত শনিবার তাদের প্রকল্প পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোক্তার হোসেন, রাজাপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুজা মণ্ডল, জেলা যুব উন্নয়ন উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান, রাজাপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল আমিন বাকলাই, ঝালকাঠি প্রেসক্লাব সভাপতি চিত্তরঞ্জন দত্ত, সহসভাপতি মানিক রায়, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষক রতন কুমার কর্মকার, ইউএসডিপি কো-অর্ডিনেটর আরমান হোসেন প্রমূখ। নাসির ও কায়েম দুজনেই জানান, চাকরি হারিয়ে বাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় কিছু একটা করার চিন্তা করে ইউটিউবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের বিভিন্ন ভিডিও দেখে তারা উদ্বুদ্ধ হন। এরপর ঝালকাঠি যুব উন্নয়নে মাছ চাষের ওপর মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন।
জেলা যুব উন্নয়ন উপ-পরিচালক মিজানুর রহমানের পরামর্শে তাদের উদ্যম বেড়ে যায়। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহায়তায় চলতি বছরের জুন মাসে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের কার্যক্রম শুরু করেন তারা। নাসির বাড়ির সামনের আঙিনায় আয়তাকার ও কায়েম তার বাড়ির পেছনে বায়োফ্লক প্ল্যান্ট বসিয়েছেন। মাছ চাষের পদ্ধতি হিসেবে তারা জানান, নিজস্ব অর্থায়নে বাইরে কাঠের বেড়া ও তাপ-নিয়ন্ত্রক দ্রব্য দিয়ে এর ভেতর ত্রিপল বিছিয়ে পুকুর থেকে ১০ হাজার লিটার পানি দিয়ে মাছ চাষের ক্ষেত্র তৈরি করে চুন ছিটিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তেলাপিয়া মাছের রেণু পোনা এনে চাষের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
আবদ্ধ জায়গায় মাছের অক্সিজেন সংকট পড়তে পারে এ জন্য সেখানে কৃত্রিম অক্সিজেনেরও ব্যবস্থা করা হয়। বায়োফ্লক চাষীদের মতে, মাছ চাষের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়। অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হওয়ায় বাণিজ্যিক মিটারে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। যদি কৃষি মিটারের আওতায় তাদের বিল গ্রহণ করা হয় তাহলে তারা আরও উদ্যমী হতে পারবেন। বেসরকারিভাবে মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হয়। যার কারণে মাছের সঠিক পুষ্টি থাকে না। সরকারিভাবে মাছের পোনা সংগ্রহ করলে আরও সফলতা আসবে উল্লেখ করে সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তারা। জেলা যুব উন্নয়ন উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, করোনায় চাকরি হারিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যয়ে যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিয়ে নাসির ও কায়েম অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, তারা চাকরির জন্য ঘুরে না বেড়িয়ে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে প্রকল্প শুরু করেছেন এবং স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা কিন্তু অন্য চাকরি করতেন। চাকরি হারিয়ে বাড়িতে ফিরে তারা যা করেছেন তা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।