ভোলা
ইলিশ না পেয়ে পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে দীর্ঘদিন জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলেরা। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহার ও অর্ধাহারে জীবন কাটছে তাদের। একদিকে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেয়া অন্যদিকে মহাজন ও বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির টাকার চাপে অনেক জেলে পেশা বদল করে এখন অন্য পেশায় চলে গেছেন।
কেউ কেউ দেনা পরিশোধের চাপে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। সরেজমিনে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচীনকাল থেকে ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন জেলেরা। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ জেলের জীবিকা নির্ভর করে ভোলার মেঘান-তেতুঁলিয়া নদীতে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে মা ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞার পর নদীতে গিয়ে কাঙ্খিত ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। কেউ কেউ আবার খালি হাতেও ফিরছেন।
বিকল্প আয়ের পথ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক জেলে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছেন। ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নাছির মাঝি গ্রামের জেলে মোঃ জাকীর মাঝি জানান, মা ইলিশের অভিযানের পর থেকে আজ পর্যন্ত নদীতে যাই। সারাদিন জাল বাই কিন্তু ২-৩ টা মাছ পাই। এতে আমাদের তেলের খরচও ওঠে না। সংসার চালামু কেমনে। একই এলাকার মুনাব মাঝি জানান, বর্তমানে নদীতে ইলিশ না থাকায় ঘরে স্ত্রী সন্তানদের ঠিকমতো তিনবেলা খাবার খাওয়াতে পারি না। কোনো রকমে লবণ-মরিচ দিয়ে দু’বেলা ভাত খেয়ে জীবন কাটাই। ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ব্যাংকের হাট এলাকার মো. সজিব মাঝি বলেন, নদীতে ইলিশ নাই। মহাজনের দাদনের টাকা ও সমিতির কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারি না। সারাদিন মহাজন ও সমিতির লোকজন টাকা পরিশোধের চাপ দেয় কিন্তু টাকা দিমু কেমনে। তাদের চাপে অনেক জেলে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার জেলে মো. আব্দুল জলিল জানান, ছোট বেলা থেকে জেলের কাজ করি। জেলের কাজ কইরা সংসার চালাই। বর্তমানে নদীতে মাছ নাই, সংসারে অনেক অভাব। তাই বাধ্য হয়ে জেলের কাজ ছেড়ে মাছ ধরার নৌকা নিয়ে নদীর এপার থেকে ওপারে খেয়ার যাত্রী পারাপার করে সংসার চালাচ্ছি।
ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝি গ্রামের নুর মোহাম্মদ জানান, একদিকে নদীতে ইলিশ নেই, অন্যদিকে আড়তদার ও বিভিন্ন সমিতির টাকা পরিশোধের চাপ। তাই অনেক জেলে ঘর-বাড়ি ছেড়ে ঢাকা, চট্টগ্রামে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান নদীতে ইলিশ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ইলিশ না পাওয়ায় অনেক জেলে কিছুদিনের জন্য অন্য কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে নদীতে ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। জেলেদের কষ্ট দূর হবে। তখন অন্য পেশায় যাওয়া জেলেরা আবার জেলে পেশায় ফিরে আসবেন।
ভোলা জেলা মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ভোলায় সরকারিভাবে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬০ জন জেলের নিবন্ধন রয়েছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারিভাবে চাল বরাদ্দ পান ৭০-৮০ ভাগ জেলে।