বরিশাল
বরিশাল ডিবি পুলিশের গাঁজা কান্ড !
জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানকে ঘিড়ে পুলিশের প্রতি সাধারন মানুষের আস্থা উঠে গিয়েছিল। তবে ধিরে ধিরে মানুষের আস্থা অর্জনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। ঠিক এমন সময় বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মাদক অভিযান নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কিত এক অভিযানকে ঘিড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে নগরজুড়ে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) নগরীর বগুরা রোডের শ্রী চ্যাটার্জি লেনের পোর্টরোড মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: কামাল হোসেনের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মোঃ ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে এসআই মোঃ ফিরোজ আলম, এএসআই মোঃ আনোয়ার হোসেন- বিপিএম এএসআই মোঃ জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম। এ সময় কিশোরগঞ্জের মজিবুর রহমানের ছেলে মো: রাসেল আহম্মেদ (২৮), একই জেলার মৃত মো: আবু সাঈদের ছেলে মো: খুরশিদ মিয়া (৫৬) ও মো: কামাল হোসেনের স্ত্রী মোসা: সালমা বেগমকে (৩৫) আটক করা হয়। তখন তাদের কাছ থেকে ১ কেজি গাঁজা উদ্ধার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখান থেকে ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত। এমনকি গাঁজা বহনকারী গাড়ির ড্রাইভারকে অর্থের বিনিময় ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। কামালের বাসা থেকে তার স্ত্রীসহ আরও দুজনকে তখন আটক করলেও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ঘুরে যায় দৃশ্যপট। অভিযানের স্থান দেখানো হয় ওই এলাকার জনৈক মৃত ফারুক মিয়ার বাড়ির বাসার সামনের পাকা রাস্তার উপরে। এ ঘটনায় কামালকেও অর্থের বিনিময় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন কামাল নিজেই। অন্য একজনকে ঘড়ের দড়জা ভেঙে আটক করা হলেও তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আর এ পুরো ঘটনার লিয়াজু করেন এএসআই মোঃ জাকির হোসেন। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
আটক সালমা বেগম বলেন- ওখানে দুই কেজি গাঁজা পেয়েছিল। এক কেজি দিয়ে চালান দিয়েছে, বাকিটা তারা রেখে দিয়েছে। এমনকি আমাকে ৩ নম্বর আসামী করার জন্য ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে কি হয়েছে আমার জানা নেই।
সালমার স্বামী কামাল হোসেন বলেন- আমার বাসায় অভিযান চালিয়ে দুই কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছিল। এক কেজি দিয়ে পুলিশ মামলা দিয়েছে, বাকিটা কি করেছে আমার জানা নেই। আমাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা ও আমার স্ত্রীর জন্য ১০ হাজার এবং গাড়ির ড্রাইভারের জন্য ১০ হাজার মোট ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে পুলিশ।
সামলা বেগম ও তার স্বামী কামাল হোসেনের দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
তবে পরিচয় গোপন করে পুনরায় কামাল হোসেনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ২০ কেজি গাঁজার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন- যা হয়েছে পুলিশ ও আমাদের মধ্যে রয়েছে। আমি আদালেতে যাওয়ার আগেই সাংবাদিকরা গিয়ে কিশোরগঞ্জের লোকদের সাথে কথা বলেছে। হয়তো ওরাই বিষয়গুলো সাংবাদিকদের বলে দিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা নিশ্চুপ, আমরা মানুষকে আগে পরে অনেক টাকা দিয়েছি, লাখ টাকাও দিয়েছি, কিন্তু কোন সময় আমরা কারো কাছে কিছু বলি নাই, বললেতো আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি। এই ২০ কেজি গাঁজার ঘটনা আমি কারো কাছে বলিনি।
বিষয়টি অস্বীকার করে এএসআই মোঃ জাকির হোসেন বলেন- পুরো বিষয়টি নেগিটিভ। এ রকম কোন কার্যক্রম হয়নি। আমরা ওখানে যে রিকোভারি পেয়েছি, সে অনুযায়ী মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে এসআই মোঃ ফিরোজ আলম বলেন- ওই অভিযানে আমাদের টিম ইনচার্জ ইসমাইল স্যার ছিলেন। আপনি তার সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইসমাইল হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন- মামলা দিয়ে বিষয়টি ক্লিয়ার করা হয়েছে। টাকা লেনদেনের বিষয়টি আমার নলেজে নাই। আমি নতুন আসছি, আমিতো সকলকে ভালোভাবে চিনিও না। আপনি ( প্রতিবেদক) এ সব বিষয় কোথা থেকে জেনেছেন। আপনি একটু ফেস টু ফেস কথা বলেন, ফোনেতো সব কথা বলা যায় না। আপনার তথ্য লাগলে আমার অফিসে আসেন।’’