বরিশাল
বরিশালে শেষ হয়নি শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ
বরিশাল বিভাগের প্রথম বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল সাত বছর ১০ মাস আগে। এখনো পুরোপুরিভাবে এটির কাজ শেষ না হলেও অল্প দিনের মধ্যেই হস্তান্তর করার আশা করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু হাসপাতালটির পরিচালনায় জনবলকাঠামো প্রণয়ন, নিয়োগ, চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়-স্থাপন ইত্যাদি কোনো কিছুই সম্পন্ন হয়নি। ফলে এটির চালু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের দিকে বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে একই মান ও নকশায় দুটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। রাজশাহীতে হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ শেষে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি উদ্বোধনও করা হয়। কিন্তু জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে সেটি এখনো চালু করা যায়নি, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
বরিশালের বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নানা কারণে সেই কাজ শেষ হয়নি।
বরিশাল বিভাগে শিশুদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসার একমাত্র জায়গা বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড। কিন্তু ওয়ার্ড-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এতে মাত্র ৩৬টি শয্যা আছে। অথচ সেখানে প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। শীত মৌসুমে এ চাপ আরও বেড়ে যায়। এ সময় নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ব্যাপক বাড়ে। সারা বছরই হাসপাতালটিতে ভর্তি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলাসহ মাদারীপুর, শরীয়তপুর জেলার রোগীরা। ফলে হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে স্থানসংকুলান হচ্ছে না। একই শয্যায় দুজন, এমনকি অনেককেই মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বহির্বিভাগে শিশু রোগীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো।
এমন পরিস্থিতিতে নগরের আমানতগঞ্জে বিশেষায়িত ২০০ শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা ভিত্তির ওপর প্রাথমিকভাবে চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এ হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণকাজই এখনো শেষ হয়নি। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের দাবি, হাসপাতালটির নির্মাণকাজের ৯৫ শতাংশ শেষ; শিগগিরই তা হস্তান্তর করা যাবে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, মূল ভবনটির নির্মাণ শেষ হওয়ার পর এর ভেতরে বিদ্যুৎ–সংযোগের কাজ চলছে। এরই মধ্যে দুটি লিফট স্থাপন করা হয়েছে। তবে ভবনটির কিছু অংশে এখনো পলেস্তারা ও রঙের কাজ বাকি আছে। সেই সঙ্গে রাস্তা, গাড়ি পার্কিং এলাকায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা।
নির্মাণাধীন শিশু হাসপাতালটির ঠিকাদার ও বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, হাসপাতালের জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় জটিলতা ছিল। এ ছাড়া হাসপাতালের জায়গাটি ছিল একটি ডোবা। সেটি ভরাট করে কাজ শুরু করতেও সময় লেগেছে।
অন্যদিকে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কামাল হোসেন হাওলাদার (হাসপাতাল) জানান, এখন বিদ্যুৎ–সংযোগসহ অন্যান্য কাজ চলছে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ভবন নির্মাণের কাজও শেষ। তবে উপকেন্দ্রের জন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অর্থ না থাকায় তা ক্রয় করা যাচ্ছে না। শিগগিরই ভবনটির কাজ শেষ করে হস্তান্তরের উপযোগী হবে।