বরিশাল
বরিশালে ভয়ঙ্কর মানবপাচার চক্র: দুই নারীসহ গ্রেপ্তার ৩
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের ভয়ানক একটি মানবপাচার চক্রকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে চক্রটির দুই নারী সদস্যসহ অন্তত তিনজনকে গ্রেপ্তারে সফলতাও এসেছে।
কাউনিয়া থানাধীন বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তবাদপল্লীর এক কিশোরীর নিখোঁজ রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাচার চক্রটির সন্ধান পায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।
বুধবার রাতভর শহরের দপ্তরখানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেখানকার একটি বাসা থেকে নিখোঁজ কিশোরীকে উদ্ধার করাসহ সুইটি, জুথি বেগম এবং আল আমিনের এই তিন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ভয়ঙ্কর মানবপাচারকারী চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল, তারা ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েকজন কিশোরীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দুবাইসহ একাধিক দেশে পাঠিয়েছে।
শায়েস্তাবাদের কিশোরী নিখোঁজ রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে এই চক্রটির দুই নারী সদস্যসহ তিনজনকে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ওই কিশোরীসহ জাল কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার তিনজনই জিজ্ঞাবাসাদে স্বীকার করেছেন তারা দুবাইয়ের যৌনপল্লীতে দেশের মেয়েদের, বিশেষ করে কিশোরীদের বিক্রি করে থাকেন। শায়েস্তাবাদের ওই কিশোরীকেও দুবাইয়ের যৌনপল্লীতে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।
কিন্তু এর আগেই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের চৌকশ টিম তাদের অবস্থান শনাক্তকরণ পরবর্তী বুধবার রাতে শহরের দপ্তরখানা রোডের একটি বাসায় সফল অভিযান পরিচালনা করেছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রুনা লায়লা এই চক্রটি সম্পর্কে আরও ভয়ঙ্কর তথ্য-উপাত্ত¡ দিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চক্রটি গ্রামের আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারগুলোকে টার্গেট করে এবং তাদের কিশোরী বয়সি মেয়েদের বিনাখরচে বিদেশে পাঠিয়ে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলেন।
এবং তারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে জাল- জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, শায়েস্তবাদের নিখোঁজ কিশোরীকে দেশের বাইরে দুবাই যৌনকাজে বিক্রির উদ্দেশে তার পাসপোর্ট তৈরি করছিল।
শিশুটিকে নিয়ে প্রথমে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে। ওই পরিচয়পত্র দিয়ে পাসপোর্ট করতে আবার বরিশালে নিয়ে আসা হয়। এরই মধ্যেই বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে বরিশাল পুলিশ।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভয়ানক এই পাচার চক্রের সাথে অন্তত ২০/২৫ জন সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের কেউ কেউ রাজধানীসহ দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেয়ে তাদের অনেকের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
পুলিশ তাদের বাগে আনতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ কর্মকর্তা রুনা লায়লা জানান, শিশু-কিশোরীরা চক্রটির এই ফাঁদ বুঝতে পেরে মত পাল্টালে তখন তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
কাউনিয়া থানায় শায়েস্তাবাদের ওই কিশোরীর মায়ের করা সাধারণ ডায়েরিটি (জিডি) মামলায় রূপ দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে আটক দুই নারীসহ তিনজনকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া চলমান আছে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এই ভয়ানক চক্রটিকে নির্মুল করতে মাঠপুলিশের কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে। ইতিমধ্যে তাদের অনেক তথ্য-উপাত্ত¡ হাতে এসেছে। কিন্তু বরিশালে তিনজনকে গ্রেপ্তারের খবরে তাদের অনেকে গাঁঢাকা দেওয়ায় ধরতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চক্রটি সম্পর্কে তিনি বুধবার রাতে অবগত হয়েছেন। তাদের যে কোনো মূল্যে ধরতে মাঠপুলিশকে সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেওয়া আছে। ইতিমধ্যে বাকিদের ধরতে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়ে গেছে, মন্তব্য করেন শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা।’