বরিশাল
বরিশাল বিভাগের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চিকিৎসকসহ জনবল সংকট!
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল বিভাগের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা এখন চরম সংকটে। চিকিৎসকসহ জনবল সংকট, যন্ত্রপাতি বিকল, অনুন্নত অবকাঠামো এবং অব্যবস্থাপনায় কোনো রকমে চলছে এগুলো। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচে বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এতে ক্ষোভ বাড়ছে তাদের।
স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের তথ্যানুযায়ী, বিভাগের ৬ জেলায় মোট ৪১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। তবে, এসব কমপ্লেক্সে চিকিৎসক পদায়ন রয়েছে চাহিদার অর্ধেকেরও কম। মোট ১২৫৪টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে বর্তমানে ৫৭১ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন, যা মাত্র ৪৫%।
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম। আধুনিক এক্সরে মেশিন থাকলেও জনবল সংকটের কারণে সপ্তাহের পাঁচ দিনই তা বন্ধ থাকে। অচল অক্সিজেন মেশিন এবং এক বছর ধরে বন্ধ থাকা আলট্রাসোনোগ্রাম মেশিনের কারণে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব পরিস্থিতির কারণে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান চেয়েছেন।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই অবস্থা। অপারেশন থিয়েটারের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। সেবা দিতে না পারার কারণে রোগীদের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। এমনকি সেসব যন্ত্রপাতির মেরামত বা প্রতিস্থাপনেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও বেহাল দশা। অপারেশন থিয়েটার অচল, এবং হাসপাতাল ভবনের ভেতর যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে রয়েছে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে এক্সরে মেশিন। পাশাপাশি, বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই ধরনের সমস্যা।
ঝালকাঠি জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই অবস্থা দেখা গেছে। সেখানে যন্ত্রপাতি বিকল থাকার অজুহাতে সকল ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে স্থানীয় জনগণ সঠিক সময় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না, এবং তারা বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে অধিক খরচে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
পিরোজপুরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক ও ওষুধ সংকট প্রকট। এখানকার রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যেখানে চিকিৎসা খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে সেবা প্রাপ্তিতে আরও অসঙ্গতি সৃষ্টি হচ্ছে এবং স্থানীয় জনগণের জন্য এটি এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এ ব্যাপারে বলেন, ‘কোনো রোগী চিকিৎসা ছাড়া ফিরছে না, বরং বরিশাল বিভাগের ১১০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যথাসাধ্য সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৪১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নত যন্ত্রপাতি বা আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে, কিছু পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন ব্লাড সুগার, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ইত্যাদি।’
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল সাফল্যের কিছু উদাহরণও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘ইপিআই কার্যক্রমে বরিশাল বিভাগ ৯৭% সফলতার সাথে কাজ করেছে। তবে স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসক সংকটের কারণে পরিস্থিতি এখনও অস্বস্তিকর।’
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল আশ্বস্ত করেছেন যে, ‘আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আছি এবং যেসব সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর সমাধানে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বরিশালের ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বরিশাল বাংলাদেশের অন্য অনেক অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি প্রত্যন্ত এলাকায় বিস্তৃত, যা স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনায় বাড়তি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বরিশালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই বেহাল দশা যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে শারীরিকভাবে দূরবর্তী অঞ্চলে চিকিৎসা পৌঁছানোর জন্য সরকারের কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও সেগুলো যথেষ্ট নয়।
স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে, রোগীদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে এবং সংকট আরও জটিল হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশা, সরকার তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করবে এবং বরিশালের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।