বরিশাল
ডাকসু’র পর এবার বাকসু নির্বাচনের দাবি ববি শিক্ষার্থীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি ওঠানোর পর এবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের দাবি ওঠান শিক্ষার্থীরা। গত ২ জানুয়ারি ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করে দাবি তোলে ঢাবির শিক্ষার্থীরা। একদিন পরে অর্থাৎ গত ৩ জানুয়ারিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচন আয়োজনের কথা জানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সহ অনেক সংগঠনের নেতৃবৃন্দই বাকসু নির্বাচনের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তবে নির্বাচনের আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার কথা ব্যক্ত করেন কেউ কেউ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও ববি শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শাহেদ জানান, আমরা অবশ্যই বাকসু নির্বাচন চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দাবিতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলা আছে। সেইসাথে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদেরও বিচার চাই। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কাজ চলবে।
এদিকে হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবি আবারও জানাবে ববি কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া ঢাবি, জাবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলছে। আমরাও চাই দ্রুত বাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হোক।
ইতোমধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের আওয়াজ তুলছেন তাঁরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও বিভিন্ন দাবি পূরণের কথা বলছেন। বাকসু নির্বাচনের কথা জানাচ্ছেন জোরেশোরে। এমনকি লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরে ববি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের এই দাবি তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে যুক্ত করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা। এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ৯ দফা দাবির সাথেও ছিলো ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা ওঠে ৫ আগস্টের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির সাথে। পরে অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবির সাথে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গত বছরের ১৭ আগস্ট ববি কর্তৃপক্ষকে ২২ দফা দাবি পেশ করে। ২২ দফা দাবির প্রথম দফাতে ১০ দিনের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনে কথা জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করে একদল শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের তোপের মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন সেই সময়ের উপাচার্য অধ্যাপক বদরুজ্জামান। পরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোন অগ্রগতি হয়নি। দাবিগুলোও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বরে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। নতুন এই উপাচার্যের কার্যক্রমে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে পদ ত্যাগের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীরা গত বছরের ১ ডিসেম্বরে আলোচনায় বসেন। আলোচনা অসম্পূর্ণতে গত ২ ডিসেম্বর রাতে উপাচার্যকে পদ ত্যাগের এক দফা দাবিতে অনড় থেকে ১৫ দফা দাবি দিয়ে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এছাড়া দুটি অংশ ভাগ করে মোট ৩০ টি দাবি তুলে ধরা হয়। স্বল্পমেয়াদী অর্থাৎ এক মাসের সময়সীমা বেঁধে ১৬ দাবি ও দীর্ঘমেয়াদি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে ১৪ দাবি দেওয়া হয় উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের কাছে। দীর্ঘমেয়াদি দাবির প্রথম দফায় ছিলো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা। তবে এই ৩০ দফা দাবির একমাস যেতে-না যেতেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা জোরেশোরেই তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের প্রায় ৫ মাস পরে এ নিয়ে আলোচনায় আছে বেশ সরগরম ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ ও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তাঁরা জানান, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চায় ছাত্র সংসদ দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে সকল অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবে, দাবি তুলে ধরতে পারবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজের কথা বলতে পারবে । আমরা বাকসু নির্বাচন দ্রুত চাই। কারণ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৯ দফা দাবির মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলা আছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁরা ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা আবারও কথা বলবো। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর চাওয়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন দ্রুত হোক। সেজন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে কর্মসূচি দিতেও বাধ্য হবে বলে জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সামগ্রিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ রয়েছে। তারপরেও শিক্ষার্থীরা যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে আমরা সেই পথেই চলবো। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সরকার যেভাবে চায়, আমরা সেইভাবে এগিয়ে যাবো।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী জানান, যেহেতু অন্যান্য ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে,তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনবোধ মনে করলে সেটি করতে হবে। এখানে সকল সংগঠনকে সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সাথে আমিও একমত।