বরিশাল
বার্ধক্যজণিত কারণে চাকরি হারালেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬০ শ্রমিক
নিজস্ব প্রতিবেদক : বার্ধক্যজণিত কারণে চাকরি হারালেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ১৬০ জন দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী। অভিযোগ রয়েছে দুই মাসের বকেয়া বেতন না দিয়েই মৌখিক নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের।
জীবনের শেষ বয়সে এসে চাকরি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তায় পরেছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষগুলো। কেননা অনেকের পরিবারে উপার্যনের একমাত্র সম্বলই ছিল সিটি করপোরেশনের এই চাকরিটি।
তাই বকেয়া বেতনসহ চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন চাকরিচ্যুত মানুষগুলো। আর এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। আগামী ৫ জানুয়ারি নগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছেন চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর কাউনিয়া হাউজিং এলাকায় বরিশাল সিটি করপোরেশন শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ইউনিয়নের সদস্যরা।
চাকরিচ্যুত শ্রমিক আব্দুল হালিম বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে আমি বরিশাল সিটি করপোরেশনে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি। এর মধ্যে গত ৫ আগস্টের পূর্বে পর্যন্ত টানা ১২ বছর র্যাব সদর দপ্তরে পরিচ্ছন্নতার কাজের দায়িত্বে ছিলাম। ৫ আগস্টের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নগর ভবনের জরুরি শাখায় কর্মরত রয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করেই ১ জানুয়ারি থেকে আমিসহ ১৬০ জন শ্রমিককে কাজে না আসার জন্য বলা হয়েছে নগর ভবনের হিসাব শাখা থেকে। তবে কী কারণে আমাদের কাজে আসতে নিষেধ করা হয়েছে, আমাদের অপরাধ কী তাও জানানো হয়নি। দেওয়া হয়নি কোনো চিঠি। এমনকি আমরা চাকরিচ্যুত সবাই দুই মাস করে বেতন পাবো। তাও পরিশোধ করা হয়নি। আমাদের প্রতি অমানবিক আচারণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকরি হারানো ১৬০ জনের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন ঢালী। ইউনিয়নে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের মধ্যে তিনিই একমাত্র চাকরি হারিয়েছেন। মোহাম্মদ হোসেন ঢালী বলেন, ‘৩০-৪০ বছর ধরে আমরা এই নগরবাসীর সেবা করে আসছি। তাদের মলমুত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে এই শহর পরিস্কার রাখছি। সেই কাজের পুরস্কার আমাদের দেওয়া হয়েছে চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে। শুধুমাত্র বার্ধক্যের অজুহাতে আমাদের মৌখিক নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোনো চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে বর্তমানে মোট ১২শ’ মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে। আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এদের মধ্যে যারা বয়স্ক শ্রমিক তারাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। কাজে ফাঁকিবাজি করছে না। এরপরও আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। নগর প্রশাসন শ্রমিক কর্মচারীদের স্কেল বাড়িয়েছে। যারা ১০ হাজার টাকা বেতন পেত তারা এখন ১৪ হাজার টাকার ওপরে বেতন পাচ্ছে। অথচ স্কেল থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের চাকরি থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বকেয়া বেতনের জন্য নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা দেবে বলে কালক্ষেপণ করছেন।
চাকরিচ্যুত শ্রমিক মোহাম্মদ হোসেন আলী বলেন, সিটি করপোরেশন আমাদের ১৬০ জন শ্রমিকের সঙ্গে অন্যায় এবং অবিচার করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। সেজন্যই আগামী ৫ জানুয়ারি আমাদের দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। প্রয়োজনে পরবর্তীতে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানান, সরকারি বিধান অনুযায়ী ৬০ বছরের পর কোনো নাগরিক চাকরি করতে পারবে না। সেই নিয়ম মেনেই নগর ভবনে কর্মরত ৬০ বছরের অধিক বয়সী শ্রমিকদের তালিকা করে তাদের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। তবে অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিকদের বকেয়া বেতন শীঘ্রই পরিশোধ করার কথা জানান তিনি।