নিজস্ব প্রতিবেদক : আজিজ তালুকদার ওরফে বাবুল তালুকদার। নগরীর লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা কাঞ্চন আলী তালুকদারের ছেলে তিনি। তিনি অত্যন্ত কৌশলী। মাদক ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত। গোপনে পরিচালনা করেন মাদক সিন্ডিকেট। নিরবে চালিয়ে যান ফেনসিডিল ব্যবসা। মাদকের বড় ব্যবসায়ী হলেও এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি। তবে একটি মামলাও ধরাশয়ী হননি ফেন্সি বাবুল। বর্তমানে তিনি দেদারছে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
লোক মারফত মাদকের বড় চালান পৌঁছে যায় বাবুলের আস্তানায়। তারপর তিনি ও তার বেশ কয়েকজন সহযোগী নগরীর অর্ধশত পয়েন্টে সুকৌশলে ফেনসিডিল সরবরাহ করেন। আর মাদক ব্যবসা করেই বাবুল অল্প সময়ের মধ্যে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। কিনেছেন বেশ কয়েকটি জমি। দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই তার। তবে তার সম্পদ এবং নির্মাণাধীন ব্যয়বহুল বাড়ি নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক বছর যাবত ফেনসিডিল ব্যবসা করেন বাবুল। বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা বাবুলের আস্তানায় ফেনসিডিলের বড় চালান সরবরাহ করেন। নগরীর দক্ষিণ বাঘিয়া এলাকাসহ নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে একটি মাদকের সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছিলো। এর আগেও বাবুল একাধিকবার পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় আবারও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পরেন তিনি। শুধু তাই নয় বাবুল মাদকদ্রব্য বিক্রি করে নগরীতে ৫ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে করেছেন একটি ভবন। পুলিশি নজরদারী এড়াতে পরিত্যাক্ত একটি ভবনের মধ্যে বসিয়েছেন অত্যাধুনিক সিসি টিভি ক্যামেরা। যেখানে বসে নিজেই মনিটরিং করেন মূল সড়ক। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পালিয়ে যান তিনি।
অভিযোগ রয়েছে- বাকিতে ফেনসিডিল খাইয়ে লিখে রাখেন বাবুল। পরে টাকার অঙ্ক বড় হলে তাদের অর্থ সম্পদ নিজের কব্জায় নেন তিনি। এমনই অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর লুৎফর রহমান সড়কের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন- বাবুল যুব সমাজকে বিপদগামী করতে ফেনসিডিলের সরবরাহ করেন। প্রয়োজনে বাকিতে ফেনসিডিল খাইয়ে লিখে রাখেন। পরে হিসেব করে টাকার পরিমান বেশি হলে এক টুকরো জমি বাগিয়ে নেন তিনি।
এলাকাবাসীর একটি সূত্র জানায়, বাবুল বড় ধরনের মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য রয়েছে অন্তত ১০জন যুবক। তারা বাবুলের হয়ে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ফেনসিডিল পৌঁছে দেয়। এসব পয়েন্টে সাধারণত খুচরা ব্যবসায়ীরা মাদকাসক্তদের কাছে মাদক বিক্রি করেন। বাবুলের নিয়োগকৃত লোকজন বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক পয়েন্টে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে। বাবুলে বাড়িতেই রয়েছে মাদকদ্রব্য বিক্রির পয়েন্ট। এসব পয়েন্ট এলাকায় থেকে দেখভাল করেন বাবুল। আর এর মাধ্যমেই বাবুল অল্প সময়ের মধ্যে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এদিকে বাবুল লুৎফর রহমান সড়কে শুরু করেছেন ব্যয়বহুল বাড়ি নির্মাণকাজ। এলাকাবাসী বলছেন, তিনি ৫ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে ৩তলা বাড়ি নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িটির এখন তিন তলার কাজ চলছে। প্রত্যেক তলায় রয়েছে দুটি ইউনিট। বাড়িটি প্রথম শ্রেণীর ইট দিয়ে গাথা। ৫ তলা বাড়িটি নির্মাণে অন্তত ২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। এছাড়া একই এলাকায় তার বাড়িরে পিছনে ফেনসিডিল খাইয়ে ৪ শতাংশ জমি কিনেছেন। এর পাশেই রয়েছে ২ শতাংশের একটি প্লট। বিল্ব বাড়ি এলাকায় রয়েছে ৮ শতাংশ জমি। আর রয়েছে নামে-বেনামে ব্যাংকে অঢেল টাকা।
এদিকে রমরমা মাদক ব্যবসা করলেও বাবুলের বিরুদ্ধে রয়েছে মাত্র ৪টি মামলা। এর মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর তিনি ৩৫ বোতল ফেনসিডিলসহ ডিবি পুলিশের জালে ধরা পড়েন। এরপর জামিনের বের হয়ে আরও বেপরোয়া মাদক ব্যবসা শুরু করেন বাবুল।
বাবুল মাদক ব্যবসার কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন- আমি এই ব্যবসা করে গায়ে কাদা লাগিয়েছি। আমাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে কি হবে? বাড়তি একটু মান-ইজ্জত যাবে। এতে আমার কিছু যায়-আসে না।
বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির শিকদার বলেন- আমি নতুন এসেছি, বাবুলকে চিনি না। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দ্রুত বাবু্লের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। মাদকের বিষয়ে কোন আপোষ নয়।