বরিশাল
বরিশালে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত আছে। এই দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার নগরে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। ‘বিদ্যুৎ গ্রাহক ঐক্য পরিষদ, বরিশাল’ এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন পরিষদের নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের সদর রোডে বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বিদ্যুৎ গ্রাহক ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। এ সময় সমাবেশে তাঁরা হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, বিদ্যুৎ খাতের সংস্কার, গ্রাহক হয়রানি-ভোগান্তি নিরসন ও বিলের সঙ্গে ডিমান্ড চার্জ বাতিলের আহ্বানও জানান।
সমাবেশে বিদ্যুৎ গ্রাহক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের বরিশাল জেলা সমন্বয়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ বলেন, বিদ্যুৎ খাত থেকে রেন্টাল, কুইক রেন্টালের নামে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের লুটেরা বাহিনী ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ৭৯ হাজার কোটি টাকার দায়-দেনা রেখে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র জনগণের সামনে প্রকাশ করার জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এটা দুঃখজনক। জনগণের টাকা লোপাটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দেওয়ান আবদুর রশিদ আরো বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করে পুরোনো মিটারের ত্রুটি সংশোধন করতে হবে। এর মাধ্যমে জনমনে স্বস্তি ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছি। যদি বিদ্যুৎ খাতের লুটের বিচার না হয়, জনমত উপেক্ষা করে বরিশালে হয়রানিমূলক প্রিপ্রেইড মিটার স্থাপন করা হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ গ্রাহক ঐক্য পরিষদের অন্যতম সংগঠক আরিফুর রহমান, লিটন খান, মির্জা মনোয়ার, রেশমা আক্তার, মারুফ আহমেদ, নাহিদ ইসলাম, রাইদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী, বাবুল ভূঁইয়া, রুবিনা ইয়াসমিন, ইয়াসমিন সুলতানা, তুহিন ইসলাম খান, ফারুক হাওলাদার, মনোয়ারা বেগম, অসীম মীর, লতিফ শিকদার প্রমুখ।
প্রিপেইড মিটারে হয়রানির কথা তুলে ধরে সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রিপেইড মিটারের কারণে সারা দেশের লাখ লাখ গ্রাহক অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই মিটারের দাম ও সংযোজন খরচ অনেক বেশি, যা গ্রাহকদের নীরবে পকেট কাটার একটি ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলেও প্রিপেইড মিটার রানিং থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ডিজিট বা নম্বর বেশি থাকার কারণে অনেকেরই রিচার্জ করতে সমস্যা হয়। তিনবারের বেশি রিচার্জ করতে গেলে মিটার বন্ধ ও টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ মিটারে সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ইলেকট্রিশিয়ান পাওয়া যায় না।
সমাবেশে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো ভোগান্তি, হয়রানি ও প্রতারণার প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করা; বিদ্যুৎ বিল থেকে ডিমান্ড চার্জ বাতিল করা; বিদ্যুৎ বিলের মূল্য সব স্লাব একই রেট নির্ধারণ করা।
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। পরে পরিষদের নেতারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর এসব দাবি সংবলিত স্মারকলিপি তুলে দেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গৌতম বাড়ৈ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।