আমতলি
বরগুনায় বিদ্যালয়ে একমাত্র শিক্ষার্থীর জন্য ৩ শিক্ষক, নিয়োগ আরও ৫
বরগুনার আমতলী উপজেলার কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটিতে আছেন তিনজন শিক্ষক ও একজন করণিক।
তাঁরা মাসে বেতন তোলেন প্রায় লাখ টাকা। কিন্তু এখানে পড়াশোনা করে মাত্র একজন শিক্ষার্থী। এই অবস্থায় স্কুলটিতে অনিয়ম করে আরও পাঁচ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়ীয়া এলাকায় ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ওই বছরই এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেখানে তেমন শিক্ষার্থী ছিল না।
দুই বছর ধরে তা প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে এখানে আব্দুল আজিজ নেছারী, দেলোয়ার হোসাইন ও হাবিবুর রহমান শিক্ষক হিসেবে এবং জব্বার মিয়া করণিক হিসেবে কর্মরত আছেন।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, শিক্ষার্থী না থাকলেও ওই বিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকায় পাঁচ কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, ওই কর্মচারীরা বিদ্যালয়ে আসেন না। শিক্ষক-কর্মচারীরা মাঝেমধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে নেই। মাত্র একজন শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, ১ ডিসেম্বর একাডেমিক সুপারভাইজার মাহমুদ সেলিম বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি আসার আগে শিক্ষকদের শিক্ষার্থী জোগাড় করে রাখতে বলেন।
শিক্ষকেরা অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী ধার আনেন। পরে সুপারভাইজার এসে ওই শিক্ষার্থীদের ছবি তুলে নিয়ে যান। ওই দিন যে ছাত্রছাত্রী এসেছিল, তারা কেউ এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে না।
গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ নেছারী ও সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান অফিস কক্ষে বসে আছেন। শ্রেণিকক্ষগুলো ফাঁকা। এক কক্ষে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আবুল খায়ের বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তার খাতায় বহিরাগত এক লোক লিখে দিচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের দেখে সটকে পড়েন।
কথা হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এই অবস্থার জন্য নিজের কপালের দোষ দেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে শিক্ষার্থী নেই, সেখানে আমার কী কথা থাকতে পারে।’ সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আশপাশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় ছাত্রছাত্রী পাওয়া মুশকিল। তাই বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী নেই।
এ নিয়ে কথা হলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিদ্যালয়ে গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছিলাম।’ তবে পরীক্ষায় কেন একজন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, এর সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অলি আহাদ বলেন, ‘একাডেমিক সুপারভাইজারকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম; কিন্তু তিনি তো এমন অবস্থার কথা বলেননি। খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।