পটুয়াখালী
পায়রায় ডুবোচরে বর্জ্য, আসছে না ইলিশ
একসময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত পায়রা নদীতে। তবে এখন কমে গেছে। এমনকি ভরা মৌসুমেও পাওয়া যাচ্ছে না ইলিশ। ইলিশ ধরা না পড়ায় এই এলাকার ১৪ হাজার জেলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গবেষকেরা বলছেন, মোহনায় ডুবোচর, নদীতে পড়ছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য—এতে করে ভরা মৌসুমেও পায়রা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। এই পরিস্থিতিতে ডুবোচর খনন করে পায়রা নদীতে ইলিশ প্রবেশ ও প্রজননের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।
বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বুড়িশ্বর বা পায়রা নদী। দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১২০০ মিটার। এই এলাকার আরও দুটি নদী বলেশ্বর ও বিষখালী। এই দুটি নদী এবং পায়রা নদী একসঙ্গে তালতলী এলাকায় সাগরে মিশেছে। এই এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু ডুবোচর। এই চরগুলো তিনটি নদীতেই জোয়ারের পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে নদীর গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
পায়রা-বিষখালী নদীর মোহনায় রয়েছে বড়াইয়্যার ডুবোচর। ১৫-২০ কিলোমিটারজুড়ে এ চর ফকিরহাট থেকে শুরু করে আশার চরে মিলিত হয়েছে। এ চরটি বঙ্গোপসাগর থেকে পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। আশার চরের শেষ সীমানা থেকে শুরু হয়েছে নলবুনিয়ার ডুবোচর।
এ চরের বিস্তৃতি ৭-৮ কিলোমিটার। এ ডুবোচরটি পায়রা নদীর প্রবেশদ্বারে অবস্থিত। পায়রার প্রবেশমুখ অতিক্রম করে ৩-৪ কিলোমিটার পরে পদ্মা ও কুমিরমারা ডুবোচর। এ চরের বিস্তৃতি ৬-৭ কিলোমিটার। এ চরে পড়ন্ত ভাটায় লোকজন হাঁটাচলা করে। জেলেরা খুঁটি গেড়ে জাল ফেলেন।
এদিকে ২০১৯ সালে তালতলীর বঙ্গোপসাগর মোহনাসংলগ্ন জয়ালভাঙ্গা এলাকায় আইসোটেক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যায়। ওই সময় থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ও গরম পানি পায়রা নদীতে ফেলা হয়। এই বর্জ্য এবং গরম পানি এখন ইলিশ প্রবেশে প্রধান বাধা। ফলে অন্যান্য নদীর তুলনায় পায়রা নদীতে কম ইলিশ প্রবেশ করে।
উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীতে ১৪ হাজার ৬৮৯ জন নিবন্ধনধারী জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে আমতলীর ৬ হাজার ৭৮৯ এবং তালতলীর ৭ হাজার ৯০০ জেলে। সারা বছর মাছ শিকার করেই চলে তাঁদের সংসার। ইলিশের ভরা মৌসুম আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস। এ চার মাসে জেলেরা মাছ শিকার করে সারা বছরের হিসাব চুকিয়ে নেন। ইতিমধ্যে ইলিশ মৌসুমের প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু ভরা মৌসুম হলেও পায়রা নদীর জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না। এতে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সাগরসংলগ্ন নলবুনিয়া গ্রামের জেলে আলমগীর হাওলাদার বলেন, মোহনায় ডুবোচরের কারণে ইলিশ পায়রায় প্রবেশ করতে পারে না। এ ডুবোচর খনন করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে না আনতে পারলে পায়রা নদীতে ইলিশের দেখা মিলবে না। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের গরম পানি ও বর্জ্য ভোগাচ্ছে। এ কারণেও ইলিশ ঢুকছে না নদীতে।
পায়রা নদীতে ইলিশ শিকারি ছাত্তার বলেন, জোয়ারের প্রথম ভাগে নদীতে তেমন স্রোত থাকে না। ফলে ইলিশ ঢোকে না নদীতে।
তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, সাগর মোহনায় ডুবোচরের কারণে পায়রা নদী নাব্যতা হারিয়েছে। এতে জোয়ারের স্রোতের তীব্রতা কমে যাওয়ায় ইলিশ প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পায়রা নদীর মোহনায় ডুবোচর খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে ইলিশ প্রবেশ এবং প্রজননে কোনো বাধা থাকবে না।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক আনিছুর রহমান বলেন, সাগর মোহনায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের গরম পানি ও বর্জ্য নদীতে ইলিশ না ঢোকার জন্য দায়ী।