তজুমদ্দিন
বিবস্ত্র করে যে কারণে নারীনেত্রীকে নির্যাতন করেন বিএনপি নেতা
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নে বিএনপির এক নেত্রীকে বিবস্ত্র করে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হাওলাদার। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ইব্রাহীমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের পক্ষ থেকে ৪ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১ জুন সকালে তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বিএনপির নারীনেত্রী ও সাবেক ইউপি সদস্যকে জনসমক্ষে বিবস্ত্র করে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। আহত অবস্থায় ওই নেত্রীকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকেরা।
চাঁচড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নেছারউদ্দিন বলেন, চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদে চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হাওলাদার ছাড়া আর কেউ যেতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘১ জুন আমাদের দলের নারীনেত্রী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ১০০ ভিজিএফ কার্ড দাবি করায় ওই নারীনেত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানো হয়।’ এ সময় ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়।
ছড়িয়ে পড়া ৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ভিডিওতে ওই নারী বলেন, ‘১ জুন আমি পরিষদে গেছি জনগণকে চাল দিতাম। আমারে কয়, আমার পরিষদে কী অধিকার। আমারে আলুর ভর্তা বানাইয়া দিব। আমার ভিজিএফ কার্ড সাদে ৪০টা। আমি চাঁচড়া ইউনিয়নের ৯টা ওয়ার্ডে ৪০টা কার্ড কীভাবে বিতরণ করি? আলাউদ্দিন দফাদার ও কলিমুল্লা দফাদারের নেতৃত্বে আমারে চুল ধরি, কাপড়চোপড় খুলি আমারে ৩ ঘণ্টা ধইরা মারছে। আমার দাঁত ফালাই দিছে।’
তজুমদ্দিন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাওলাদার আজ শনিবার বলেন, ‘আমার বাড়ি চাঁচড়া ইউনিয়নে। ১ জুন আমাদের দলের নারীনেত্রী ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কাছে ১০০ ভিজিএফের কার্ড চাওয়ায় তাঁকে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায় দুষ্কৃতকারীরা।’
এ ঘটনায় ছাত্রদল নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মা-বোন সবারই আছে। একজন নিরীহ নারীকে এভাবে বিবস্ত্র করে শত শত মানুষের সামনে এটা করা ঠিক হয়নি।’
এ বিষয়ে চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইয়াজউদ্দিন শিরান বলেন, ‘ওই দিন আমি পরিষদে উপস্থিত ছিলাম না। তাই ওই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানি না।’
তজুমদ্দিন উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘একজন নারীনেত্রীকে জনসমক্ষে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, মধ্যযুগীয় বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেছে। তাই দায়ীদের শাস্তি না হলে সমাজে নারীর নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত খান বলেন, ‘ওই ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। আসামিরা সবাই আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।’