জাতীয়
দায় স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নুরুল হুদা
রাষ্ট্রদ্রোহ ও অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই দফা রিমান্ড শেষে হুদাকে হাজির করে পুলিশ। এরপর নূরুল হুদা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে তাকে আদালত থেকে বের করা হয়।
নূরুল হুদার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এদিন রিমান্ড শেষে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করেন পুলিশ। আমরা তার জামিনের দরখাস্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থিত হই। এরপর আদালতে এসে জানতে পারি তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিচ্ছেন।
এর আগে গত ২৩ জুন সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া গত ২৭ জুন আবারও চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২২ জুন রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত নূরুল হুদাকে আটক করে জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
উল্লেখ্য, বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে মামলা করে।
মামলায় সাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। একইসঙ্গে ওইসব নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী তিন সাবেক সিইসিসহ অজ্ঞাতপরিচয় মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পৃথকভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছে দলটি।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালে তৎকালীন সামরিক শাসকদের সহায়তায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তা পাকা-পোক্ত করার জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে যে সংসদ নির্বাচনী পদ্ধতি চালু ছিল তা বাতিল করান।
২০১৪ সালে শেখ হাসিনাসহ তার সরকার অবৈধভাবে শপথ নেওয়ার পর অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে তিনিসহ তার মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের অপহরণ করা, গুম, গুরুতর জখম, হত্যা ও বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন শুরু করে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আসামি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করেন। পরে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।