বরিশাল
বরিশাল বিভাগে ২১-৩০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া গ্রামের ২৫ বছর বয়সী হাসান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার বাড়ির চারপাশে ছোট ডোবা থাকায় মশার উপদ্রব বেশি। হাসান জানান, মশার কারণে ঘরে টেকা কঠিন হয়ে পড়ছে। সব সময় কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। পরিবারের সবাইকে মশা কামড়ালেও তিনিই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
হাসানের বাবাও মশার কামড়ে হাতে ফোলা দেখিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি নিজেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমাকেও দ্যাখেন, কেমনে কামড়াইছে। আজকালকার মশাগুলো খুব বাজে। কামড়ালে ফুলে ওঠে। টেনশনে আছি, আমারও ডেঙ্গু হয় কি না।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, আমরা যতগুলো রোগী পেয়েছি এরমধ্যে অধিকাংশ রোগী তরুণ। কিছু শিশু ও বৃদ্ধ আছে। মাঝ বয়সী রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম।
কোন বয়সী মানুষ বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন এই তথ্য জানতে যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ে। তাদের কাছে এমন পরিসংখ্যান না থাকলেও আক্রান্ত রোগী ও তাদের বয়সসীমা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে গত ১৫ জুন পর্যন্ত দেওয়া তথ্যের পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালে ২৬৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছরের তরুণ-তরুণী। এই বয়সের ৬১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা মোট আক্রান্তের ২৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছরের যুবক। এই বয়সের ৫৫৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, যা মোট আক্রান্তের ২১ শতাংশ। এছাড়া ১১ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীও আক্রান্ত হয়েছে ৫৫২ জন, যা মোট আক্রান্তের ২১ শতাংশ। ৪১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৮২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা ১৮ শতাংশ। এক বছরের কম বয়স থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ৩৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে। যা মোট আক্রান্তের ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া ৬০ থেকে তার চেয়ে বেশি বয়সী ১৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। যা ৪ শতাংশ।
বিভাগের ছয়টি জেলার মধ্যে ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ রোগী বরগুনা জেলার। বাকি ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী অন্য ৫ জেলার।
ডেঙ্গু রোগে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে কী কারণে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বরিশালের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা: খান মোশতাক বলেন, শিশু ও তরুণরা সাধারণত মশারি ছাড়া ঘুমাতে পছন্দ করে। তাছাড়া তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। যেহেতু ডেঙ্গু মশা দিনের বেলায় কামড়ায় তখন সুবিধাজনকভাবে শিশু, কিশোর ও তরুণদের পায়।
বরগুনা জেনালে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, এডিস মশা যাকে কামড়াবে তারা সংক্রমিত হবে। সাধারণত তরুণরা উন্মুক্ত স্থানে ঘুরে বেড়ায়, খেলাধুলা করে। এডিস মশাও এসব স্থানে থাকে বিধায় তারা বেশি আক্রান্ত হতে পারে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজ (২৯ জুন) পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ৪ হাজার ৫৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জন মারা গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪১৬ জন।