বরগুনা
বরগুনায় ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি, মৃত্যু বেড়ে ১৩
বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন রোগী। চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। শুধু বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ৫ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বরগুনায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরগুনা জেলাতেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ৬১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। ১৫০ নার্সের স্থলে আছেন মাত্র ৬৬ জন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন প্রায় ৫০০ জন রোগী। পাশাপাশি আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও প্রায় ৫০০ জন। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
গুরুতর অবস্থায় অনেক রোগীকে বরিশাল বা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। সম্প্রতি কলেজ ব্রাঞ্চ রোড এলাকার পাপড়ি বেগমকে (৬৫) ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এর আগে খামারবাড়ি এলাকার স্কুলছাত্র ওমর আল আরাবি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়। একইভাবে আজমেরী মোনালিসা জেরিন নামে এক নারী উদ্যোক্তাও মৃত্যুবরণ করেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত দেড় বছরের শিশু আবদুল্লাহ নামে এক শিশুর মা শিল্পী বেগম বলেন, আমি ও আমার ছেলে দুনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ কিছুই পাইনি, সবকিছু বাইর থেকে কিনতে হচ্ছে। আমার স্বামী রিকশা চালায়, এত খরচ কিভাবে চালাবো?
অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিজান রানা নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ৪দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছি কিন্তু হাসপাতালে একটি নরমাল স্যালাইনও স্টকে নাই। এমনকি বাজারের কোনো ফার্মেসিতেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও ডাক্তারও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছে।
হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।