শিক্ষা
শিক্ষায় ৯৩৪ কোটি টাকার বাড়তি বরাদ্দ, বাড়ছে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা
২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৯৩৪ কোটি টাকা। দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে শিক্ষা খাতকে এবারও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাড়তি বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তাদের বোনাস ও গ্র্যাচুইটি বাড়ানোর পাশাপাশি সব স্তরের শিক্ষকদের উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ কর্মসূচি।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিতে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে যুগোপযোগী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার অব্যাহতভাবে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। সে অনুযায়ী বাজেটে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ ও কারিগরি শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে পৃথকভাবে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
মাধ্যমিকে সুখবর, প্রাথমিক খাতে সংকটের শঙ্কা
প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা আগের তুলনায় ৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা বেশি। এই বাজেট বৃদ্ধির বড় অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য। বাড়ছে তাদের বোনাস ও গ্র্যাচুইটি সুবিধাও। একই সঙ্গে শিক্ষকদের দক্ষতা ও মানোন্নয়নে বিভিন্ন মানবসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেও বরাদ্দ ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। অতিরিক্ত বরাদ্দের পরিমাণ ৮৯৫ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এ বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ বরাদ্দ কমেছে ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। বাজেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক খাতে এ অর্থসংকট বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একই সঙ্গে শিক্ষার মৌলিক স্তরেই ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্কুল ফিডিং ফের চালু, উপবৃত্তি বাড়ছে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল ফিডিং কর্মসূচি ফের চালু করতে বাজেটে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই তহবিলের মাধ্যমে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার স্কুলে শিশুদের জন্য খাবার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের আশা, এতে শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির পরিধি ও পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এতে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বই ছাপাতে বরাদ্দ ১৬০০ কোটি, ওবিইতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫–২৬ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে বইয়ের মানোন্নয়ন ও বিতরণে নজর দিচ্ছে সরকার।
এ ছাড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আউটকাম বেইসড এডুকেশন (ওবিই) পদ্ধতির কারিকুলাম বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে করে উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা যাবে বলে আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইবতেদায়ি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় যত বরাদ্দ
ইবতেদায়ি স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি কার্যক্রম চালু রাখতে বাজেটে ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনতে এই বরাদ্দ ব্যয় করা হবে।
কলমে শুল্ক প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের বাড়তি সুবিধা
প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা সহায়ক পণ্যের মূল্য কমাতে বলপয়েন্ট কলমের ওপর সব ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কলমের দাম কমবে, যা স্বস্তির বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।