কলাপাড়া
ঠিকাদারকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মহসিন!
নিজস্ব প্রতিবেদক : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) নামের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঠিকাদার শাহীন মৃধার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিনের বিরুদ্ধে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মিফতা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নাম শাহীন মৃধা। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া জেটি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
শাহীন মৃধা ধানখালী ইউনিয়নে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) নামের নির্মাণাধীন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করে আসছিলেন। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (মহসিন) ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল সরবরাহের একটি কাজ পেয়েছেন।
শাহীন মৃধার অভিযোগ করে বলেন- গত শনিবার (১০ মে) জেটি ঘাটের ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করে নতুন ঠিকাদারকে সরিয়ে পূর্বের ঠিকাদারকে বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনদিন পর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম মহসিনের নেতৃত্বে ২০০/৩০০ লোক তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে। এরপর পুড়িয়ে মেরে ফেলতে আমাকে ভিতরে রেখে অফিস বাহির থেকে আটকে দিয়ে পেট্রোল মেরে আমার অফিস জালিয়ে দেয়। এতে আমার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় স্থানীয় বাসিন্দা দোলন মৃধা (৩৫), মিরাজ হোসেন (৩৭) ও আমার গাড়িচালক রানা (৩২) আহত গুরুতর হয়েছেন। এ সময় স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলে একদল যুবক ধানখালীর মরিচবুনিয়া এলাকায় যান। তাঁরা শাহীন মৃধার শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, তাঁর বসবাসের একটি ঘর ও শ্রমিকদের বসবাসের ছাউনিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে ঘরে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ আসবাবপত্র পুড়ে যায়। খবর পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর জন্য রওনা হলে পথে ছয় লেন সড়ক এলাকায় একদল লোক আটকে দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে লোকজন সরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আগুন লাগার খবর শুনে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। পথে কিছু লোক বাধা দিয়েছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের আসতে দেখে সেসব লোক সটকে পড়ে। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিই।’
ব্যবসায়ী শাহীন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আমিনুল ইসলাম মহসিনের নেতৃত্বেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী যুবকেরা লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে এসে তাঁর কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এমনকি সন্ত্রাসীরা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালাবদ্ধ করে হামলাকারী চক্র আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি বের হতে না পারলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। এমন জাহিলি কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
এ ঘটনায় বুধবার (১৪ মে) ক্ষতিগ্রস্ত ঠিকাদার মো. শাহীন মৃধা কলাপাড়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও মামলায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল তালুকদার, ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ তালুকদার, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন গাজী, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুয়েল ইকবালসহ ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মোট ২১ জনের নামোল্লেখ করে আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে মামলায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি তা রিসিভ করেন নি।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’