নিজস্ব প্রতিবেদক : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলায় তিনজ আহত হয়েছেন
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া জেটি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম শাহীন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়নে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) নামের নির্মাণাধীন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করে আসছিলেন। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (মহসিন) ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল সরবরাহের একটি কাজ পেয়েছেন।
শাহীন মৃধার অভিযোগ, আমিনুলের লোকজন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে তাঁর কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় স্থানীয় বাসিন্দা দোলন মৃধা (৩৫), মিরাজ হোসেন (৩৭) ও তাঁর গাড়িচালক রানা (৩২) আহত হয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম বলছেন, শাহীন মৃধা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহে বাধা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ আছে। তিনি আজকের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলে একদল যুবক ধানখালীর মরিচবুনিয়া এলাকায় যান। তাঁরা শাহীন মৃধার শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, তাঁর বসবাসের একটি ঘর ও শ্রমিকদের বসবাসের ছাউনিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে ঘরে থাকা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ আসবাব পুড়ে যায়।
খবর পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর জন্য রওনা হলে পথে ছয় লেন সড়ক এলাকায় একদল লোক আটকে দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে লোকজন সরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আগুন লাগার খবর শুনে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। পথে কিছু লোক বাধা দিয়েছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের আসতে দেখে সেসব লোক সটকে পড়ে। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিই।’
ব্যবসায়ী শাহীন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী যুবকেরা লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে এসে তাঁর কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এমনকি সন্ত্রাসীরা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালাবদ্ধ করে হামলাকারী চক্র আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি বের হতে না পারলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। এমন জাহিলি কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আসলে শাহীন মৃধা আওয়ামী লীগের লোক। তাঁর সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুরের সুসম্পর্ক ছিল। সে নিজে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এলাকার লোকজন এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ করে আসছে। আমি আরএনপিএল নামের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছি। এতে শাহীন মৃধা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এমনকি আমার শ্রমিকদের মালামাল সরবরাহে বাধা দিয়েছে। এসব নিয়ে শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।’
তিনি বলেন, তিনি এলাকায় থাকেন না। ঢাকায় বসবাস করেন। এখন এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তিনি জানেন না। তাঁকে নিয়ে কোনো কথা বলে থাকলে তা উদ্দেশ্যমূলক। তিনি ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির পাশের স্থাপনায় চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতা চালায়। বর্তমানে সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।