কলাপাড়া
পটুয়াখালীতে টাকার জন্য স্ত্রীকে মাদকসেবিদের কাছে তুলে দেয় স্বামী, নির্যাতনের পর হত্যা
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাত্র এক হাজার টাকার জন্য স্ত্রীকে তুলে দেয় চার মাদকসেবির কাছে। এরপর একটি পরিত্যক্ত ভবনে চলে রাতভর নির্যাতন। এতে গৃহবধু হালিমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এতে পাষন্ডদের মনের স্বাদ মেটেনি। ধরা পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় ঠান্ডা মাথায় হালিমার ওড়না তার গলায় পেঁচিয়ে দুই দিক থেকে দুজনে টেনে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর গভীর রাতে মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে খালের ময়লার মধ্যে লুকিয়ে রাখে।
কলাপাড়ার রহমতপুর জ্বীন খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মূল ঘাতক হালিমার স্বামী রাসেল বেপারী ওরফে রানাকে গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে এভাবেই হালিমাকে হত্যার বর্ননা করে। যা শুনে হতবাক হয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তারাও।
পুলিশ এ ঘটনায় রানার সহযোগী মাসুম রাঢ়ী, জালাল খলিফা ও শুভ হাওলাদার কে কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। তবে ঘটনায় জড়িত অপর সহযোগী মাসুম হাওলাদার পলাতক রয়েছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুয়েল ইসলাম জানান, গত ৭ মে জ্বীন খাল থেকে অজ্ঞাত মৃতদেহ উদ্ধারের পরই তারা তদন্ত শুরু করে। ওইদিন গৃহবধুর মা রাশিদা বেগম তার মরদেহ সনাক্ত করে। এরপরই প্রধান আসামী হালিমার স্বামী রানা কে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর তিনজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতার চার আসামীকে আদালতে প্রেরন করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আসামীদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
গত ২৭ এপ্রিল রাতে রহমতপুরে একটি পরিত্যক্ত ভবনে চলে এ নির্মম নির্যাতনের পর হত্যার ঘটনা। ওই রাতেই নিহত গৃহবধূ হালিমার মরদেহ খালের ময়লার মধ্যে ঢ়ুকিয়ে রাখে পাষন্ডরা। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
কলাপাড়া থানার পরিদর্শক তদন্ত ইলিয়াস তালুকদার জানান, তারা ৭ মে মরদেহ উদ্ধারের পরই তার পরিচয় সনাক্তের জন্য কাজ শুরু করেন। ওই দিন দুপুরে নিহতের মা রাশিদা বেগম তার মেয়ের মৃতদেহ সনাক্ত করেন। এরপর বিকালে অভিযান চালিয়ে প্রথমে তার স্বামী রানাকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনায় জড়িত অপর চার জনকে সনাক্ত ও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর মা ৮ মে কলাপাড়া থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলায় বলা হয়, আমতলী উপজেলার পাতা কাটা গ্রামের মৃত সেকান্দর দুয়ারীর মেয়ে হালিমার সাথে এক বছর পূর্বে কলাপাড়া পৌর শহরের অফিস মহল্লা এলাকার সৈয়দ বেপারীর ছেলে রাসেল বেপারী ওরফে রানার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে হালিমার উপর নির্যাতন করে আসছে রানা। সে নিয়মিত মাদক সেবন করায় নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়তো। সে প্রায়ই তার মাদকসেবনের সহযোগীদের কাছে তাকে তুলে দেয়ারও চেষ্টা করে। এতে হালিমা নিজের সম্মান বাঁচাতে সে বাবার বাড়ি চলে গেছে একাধিকবার। সবশেষে বাবার বাসা থেকে ২৭ এপ্রিল আবার স্বামীর বাড়িতে আসে এবং ৭ মে খাল থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।