ভোলা
ভোলায় বেড়াতে এসে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করলেন চীনা যুবক
অনলাইনে (ইউচ্যাট) বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দ্বীপজেলা ভোলায় এসে কলেজ পড়ুয়া বন্ধুর বোনকে বিয়ে করলেন চীনা যুবক ইরিছা চং। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৫ মে) ১০ লাখ টাকা কাবিনে চীনা এই যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের ইলিয়াস হাওলাদারের মেয়ে নাবিয়া আক্তারের।
জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ভোলার ভেলুমিয়ার ইলিয়াস হাওলাদারের ছেলে রনির সঙ্গে ইউ চ্যাটের মাধ্যমে পরিচয় হয় চীনা যুবক ইরিছা চংয়ের সঙ্গে। এরপর প্রায়ই তাদের কথা হতো। একপর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল চীন থেকে বাংলাদেশের দ্বীপ জেলা ভোলা ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামে আসেন ২৫ বছর বয়সী টগবগে চীনা এ যুবক। এরপর প্রায় এক মাসের মতো বন্ধু রনির বাড়িতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে বন্ধুর ছোট বোন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাবিয়া আক্তারকে পছন্দ করে ফেলেন তিনি, দেন বিয়ের প্রস্তাবও।
প্রথমে মেয়েটির পরিবার বিয়েতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে চীনা এই যুবকের সঙ্গে বিয়ের সম্মতি প্রকাশ করেন তারা। অবশেষে গত ৫ মে রাতে ১০ লাখ টাকা কাবিনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নাবিয়াকে বিয়ে করেন চীনা যুবক ইরিছা চং।
এ বিয়েতে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে চীনা এই যুবককে একনজর দেখতে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। কোনো বিশ্রাম নেই এই যুবকের। মানুষের ভিড়ে রান্না-বান্নায়ও সময় দিতে পারছে না ইলিয়াছ পরিবারটি। একপর্যায়ে মানুষ থেকে নিজেকে আড়াল করতে ওই চায়না যুবক মোটরসাইকেলযোগে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
মেয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইরিছা চং একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান। চীনের লানজু শহরে তার জন্ম। তার বাবার নাম মেছউধা। দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে ইরিছা দ্বিতীয়। তিনি লানজু শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানা যায়। এদিকে নাবিয়া স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী। নাবিয়া এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।
নাবিয়ার ভাই রনি জানান, ইউচ্যাটের মাধ্যমে চীনা এই যুবকের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। পরে তিনি বাংলাদেশে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে ১১ এপ্রিল তিনি চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন। এক মাসের মতো তাদের বাড়িতে থাকেন। একপর্যায়ে তার ছোট বোন নাবিয়াকে তিনি পছন্দ করে ফেলেন। পরে নাবিয়াকে বিয়ে না করে চীনে ফিরবেন না বলে জানান তিনি।
নাবিয়ার বাবা ইলিয়াস হাওলাদার জানান, প্রথমে তারা কেউই এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। পরে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে খোঁজখবর নিয়ে তারা নাবিয়াকে ইরিছার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এতে সবাই খুশি। জামাই তাদের পছন্দ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ইরিছা নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং তিনি মুসলিম। তাই বিদেশি এই যুবককে জামাই হিসেবে পেয়ে তারা খুশি। চীনা যুবককে বিয়ে করতে পেরে নাবিয়া আক্তারও খুশিতে আত্মহারা।
বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়ে করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছেন ইরিছা চং। তিনি বলেন, নাবিয়া এবং তার ভাইয়ের পাসপোর্টের কাগজপত্র ঠিকঠাক হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি তাদেরকে নিয়ে চীনের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। খুব দ্রুত চীনে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে তিনি পাসপোর্টসহ আনুষঙ্গিক সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করছেন।
বিদেশি কোনো ছেলে এই প্রথম দ্বীপের রাণী ভোলায় এসে গ্রামের একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করায় ভোলাজুড়ে এখন সব বয়সী মানুষের মুখে মুখে শুধু ইরিছা চংয়ের নাম। তাকে একনজর দেখতে ছুটে আসছেন হাজারো মানুষ।
এ বিষয়ে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাইন পারভেজ বলেন, চীনা যুবক ভোলায় এসে বিয়ে করেছেন, এ বিষয়টি পুলিশকে কেউ জানায়নি।