বরিশাল
বরিশালে বিক্রি করা জমি বুঝিয়ে দিলেও দোকান তুলতে বাধা, বিপাকে ব্যবসায়ী
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল নগরীতে চলাচলের জন্য রাস্তার জমি বিক্রি করে বিপাকে পড়েছেন মোঃ দুলাল হাওলাদার নামের এক ব্যবসায়ী। বিক্রি করা জমি বুঝিয়ে দিলেও নিজের অবশিষ্ট জমিতে দোকান তুলতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মোঃ দুলাল হাওলাদার। এমনকি দোকান নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে থানায় সাধারন ডায়েরি ও আদালতে একটি এম.পি মামলা করে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করিয়েছেন পার্শ্ববর্তী জমির মালিক মোঃ রুহুল আমিন সিকদার।
ঘটনাটি বরিশাল নগরীর ১নং ওয়ার্ডস্থ হাওলাদার সড়কের।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মোঃ রুহুল আমিন সিকদারের ডাক্তার কন্যা নিজস্ব গাড়ী নিয়ে ড্রাইভারসহ বাসায় আসার সময় ৪৭ নং কাউনিয়া মৌজার খতিয়ান নং ৪৯৭ এসএ নং- ২১৯ দাগের জায়গায় দুলাল গং কিছু গুন্ডা-পান্ডা লোক নিয়ে প্রাইভেটকার যেতে বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে তারা মারমুখী আচরণসহ জীবন নাশের হুমকিসহ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় রুহুল আমিন গং উচ্চস্বরে ডাক চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন এসে ঘটনা দেখে এবং দুলাল গংদের মারমুখী আচরণ করতে নিষেধ করেন। তখন দুলাল গংরা চলে যায়। পরের দিন দুলাল গং রুহুল আমিন গংয়ের গাড়ীর গ্যারেজে যাতে আসা-যাওয়া করতে না পারে তার জন্য সেখানে একটি ছাপড়া ঘর জোরপূর্বক উত্তোলন করে। এ নিয়ে রুহুল আমিন গং কাউনিয়া থানায় সাধারন ডায়েরি করেন। যার নং-৫৯৬ (১৫/০৪/২০২৫)। বর্তমানে ওই জায়গা দিয়ে গাড়ী আসা যাওয়া করতে পারে না। এমনটি উল্লেখ করে আদালতে একটি এম.পি মামলা দায়ের করলে আদালত ওই জমিতে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করে।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে- বহু বছর আগে মোঃ রুহুল আমিন সিকদার ওই জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের সময় প্রধান সড়কে বের হওয়া জন্য তার রাস্তা ছিলনা। সে রাস্তার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ দুলাল হাওলাদারের কাছে কিছু জমি দাবি করেন। সেসময় স্থানীয়দের সুপারিশে ও মোঃ রুহুল আমিন সিকদারের আকুতি-মিনতিতে মোঃ দুলাল হাওলাদার তার কাছে .২৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে বুঝিয়ে দেয়। তার পাশেই মোঃ দুলাল হাওলাদারের ছিল। এর কেয়েক বছর ওই জমিতে সিটি করপোরেশনের রাস্তা নির্মাণ হয়। এরপর থেকে অন্য স্থান থেকে জমি দাবি করে আসছেন মোঃ রুহুল আমিন সিকদার। সম্প্রতি মোঃ দুলাল হাওলাদারের দোকান নিয়ে মাথা ব্যাথা শুরু হয় মোঃ রুহুল আমিন সিকদারের। বহুতল ভবনের সামনে টিনের তৈরী দোকান থাকায় তার ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি তোলেন মোঃ রুহুল আমিন সিকদার। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এদিকে ঝামেলা এড়াতে টিনের দোকান ভেঙে পাকা দোকান তোলার উদ্যোগ নেয় মোঃ দুলাল হাওলাদার। পুরনো দোকান ভেঙে নতুন দোকান তোলার সময় জানতে পারেন তাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরি ও আদালতে একটি এম.পি মামলা করে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করিয়েছেন মোঃ রুহুল আমিন সিকদার। এতে করে বিপাকে পড়েছেন দুলাল হাওলাদার।
স্থানীয়দের অভিযোগ- মোঃ রুহুল আমিন সিকদার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এমনকি বাড়ির নিচে মুক্তিযোদ্ধার সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখেন। নির্মাণ কাজ চলাকালিন তিনি বাড়ির সামেনে ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড় রেখে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুলাল হাওলাদারের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখতেও বাধ্য করেছিলেন। তিনি যে অভিযোগ করেছেন দুলালের দোকানের কারনে তার প্রাইভেটকার বাসায় ঢুকতে সমস্যা হয় ও গুন্ডা-পান্ডা লোক নিয়ে প্রাইভেটকার যেতে বাঁধা দেয় তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দুলাল তার নিজ জমিতেই দোকান নির্মাণ করেছেন। এদিকে সরকার পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার প্রস্তুত করার নির্দেশ দিলে রাতের আঁধারে সেই সাইনবোর্ড খুলে ফেলেন মোঃ রুহুল আমিন সিকদার। পরবর্তীতে প্রশাসনের ও মেয়ের শ্বশুর বাড়ির প্রভাব খাটিয়ে মোঃ দুলাল হাওলাদার ও তার পরিবারের নামে মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা দায়ের করেন।
মোঃ দুলাল হাওলাদার বলেন- মোঃ রুহুল আমিন সিকদার ওই জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের সময় তার বের হওয়া জন্য রাস্তা ছিলনা। আমার কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করে রাস্তার জন্য জমি নিয়েছে। তখন আমি তাকে জমি দিয়ে উপকার করেছি। হঠাৎ তিনি আমার টিনের তৈরী দোকান সরানোর জন্য চাপ দেয়া শুরু করে। আমি ঝামেলা এড়াতে টিনের দোকান ভেঙে পাকা দোকান নির্মাণের উদ্যোগ নেই, কিন্তু মনগড়া সাধারন ডায়েরি ও আদালতে একটি এম.পি মামলা করে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন মোঃ রুহুল আমিন সিকদার।
তিনি আরও বলেন- আমি তার জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। সেই জমিতে এখন সিটি করপোরেশনের রাস্তা। এখন তিনি একই দাগের আমার জমির তফসিল উল্লেখ্য করে মামলা করেছেন। তিনি কি ক্ষমতা বলে আমার জমিতে দোকান নির্মাণের কাজ বন্ধ করেছেন তা বুঝতে পারছি না। আমি এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
এ ব্যাপারে মোঃ রুহুল আমিন সিকদার বলেন- দুলাল হাওলাদারের কাছ থেকে আমি যে জমি কিনেছি যেটা বুঝিয়ে দেয়নি। সে জমি বুঝিয়ে না দিয়েই পাকা দোকান নির্মাণ করছেন। ওখানে দোকান হলে আমাদের গাড়ি চলাচলে কষ্ট হতে পারে। কারণ সামনে বিভিন্ন মালামাল রাখবে যার কারণে চলাচল করতে পারবো না। বিষয়টি এখন আদালত সমাধান করবে।
এ বিষয়ে কাউনিয়া থানার ওসি নাজমুল নিশাত বলেন- যেহেতু ওই জমিতে আদালত ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করেছে সেহেতু বিষয়টি মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোন কাজ করা যাবে না।