বরিশাল
বরিশালে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় বাড়ছে অপরাধ!
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, অপহরণ ও চুরি বেড়েছে। চলছে নীরব চাঁদাবাজি। আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে জমিজমার বিরোধ। থানা-পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে বেড়েই চলছে অপরাধ প্রবণতা। এ জন্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে অনেকটা দায়ী করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কার্যকর তেমন একটা ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ৬ জেলায় ৪৮০টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ছয় মাসে অপরাধ সংগঠিত হয়েছ ৫৮০টি। এর মধ্যে হত্যা ৮১টি, ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা ১৪৬টি, অপহরণ ১৪টি, ডাকাতি ২৬টি, দস্যুতা ২১টি, চুরি ২৯২টি।
স্থানীয়রা বলছেন, বরিশাল নগরীর কাশীপুরের ইছাকাঠী এলাকায় দীঘি, পুকুর ও ডাস্টবিন থেকে এক নারীর শরীরের সাতটি অংশ উদ্ধার হলেও ভিকটিম চিহ্নিত হয়নি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘাট ইজারা দ্বন্দ্বে চাচাকে খুন করে নদীতে ডুবিয়ে দেয় ভাতিজা।
গত দুই মাসে ঝালকাঠির বাউকাঠী বাজারের ব্যবসায়ী সুদেব হত্যা, গৌরনদীতে জমিজমা বিরোধে এক শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার, নগরীতে খুন হয় যুবদল নেতা, বানারীপাড়া স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় অভিযুক্তদের আটক না করাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধীরা অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহী হচ্ছে। এ ছাড়া দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা শক্তিশালী হওয়ায় আইনের আশ্রয়ে যাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ দিতে থানায় আসতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে অনেক ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে।
বরিশালের মানবাধিকারকর্মী ও উন্নয়ন সংগঠক দীপু হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে নতুন সরকার এসেছে। দুই-তিন দিন কোনো সরকার ছিল না। এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের সময় নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে পুলিশ বিতর্কিত হয়ে পড়ে। তারা তাদের মনবল হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ কাজের লাগিয়েছে অপরাধীরা। এর থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশের পাশে থেকে সহযোগিতা করে তাদের মনোবল বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করা বন্ধ এবং পুলিশের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে পুলিশের মনোবল বাড়বে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকাও পালন করতে পারে। তা হলে অপরাধের সংখ্যাও কমে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিন দিন হত্যা, গুম, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। নইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার কালিমা কপালে লেপন হবে, এটা নিশ্চিত বলা যায়।’
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালে সভাপতি অধ্যক্ষ (অব.) গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পুলিশের মধ্যে এখনো গা-ছাড়া ভাব দেখা যায়। তারা নিরপেক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আগামী দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের কাজে সহায়তা দিতেও সাধারণের মানুষকে দাঁড়াতে হবে।’
বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্টের পর পুলিশে যে শ্লথগতি ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে শতভাগ জিরো টলারেন্স ভূমিকায় রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য শত ভাগ কাজ করে যাবে পুলিশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটে। সেগুলো ব্যক্তি পর্যায়ে হয়। কিন্তু সামষ্টিক কোনো অপরাধ সংঘটিত করে কেউ পার পেয়ে যাবে, সেই সুযোগ এখন আর নেই।’