বাবুগঞ্জ
বরিশালে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, প্রধান অভিযুক্ত যুবদল নেতা গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের বাবুগঞ্জে চাঁদা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে জনৈক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাবের একটি টিম বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব (বহিস্কৃত) এবায়দুল হাসানকে স্থানীয় ক্যাডেট কলেজসংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারে সফলতা পায়। পরে তাকে ঘটনাস্থলসংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এলিট ফোর্স।
পুলিশ জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পাঁচদিনের মাথায় গত ১১ আগস্ট বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা ইউনিয়নের বকশিরচর গ্রামের সুলতান হাওলাদার (৬৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন যুবদল নেতা এবায়দুলসহ তার সহযোগীরা। এই নৃশংস ঘটনায় নিহতের ছেলে মনিরুজ্জামান জুয়েলের স্ত্রী সাদিয়া আফরিন নুপুর বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। ওই মোকাদ্দমায় এবায়েদুল হাসান, তার সহযোগী সোহেল এবং মিঠুসহ চারজনকে নামধারীসহ মোট ৬জনকে অভিযুক্ত করেছেন। এই খুনের ঘটনায় যুবদল নেতাকে ১১ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২২ আাগস্ট সাংগঠনিক পদ থেকে অপসারণ করলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিনি এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকলেও তাকে প্রায়শই প্রকাশ্যে দিব্যি ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়, যে বিষয়টি গত সাত মাস ধরে পুলিশকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি। কদিন ধরে তিনি অধিকাংশ সময় এলাকায় অবস্থান নিয়ে ছিলেন এবং পুনরায় সন্ত্রাসী বাহিনী একট্টা করতে কাজও শুরু করেন, যা নিয়ে স্বয়ং বাদী ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন। এবং পুলিশকে তুলধুনো করতে ভুল করেননি তরুণী বাদী।
সূত্র জানিয়েছে, থানা পুলিশের কাছ থেকে কোনো রূপ সহযোগিতা না পেয়ে সর্বশেষ মামলার বাদী এলিট ফোর্সের স্মরণাপণ্ন হন। এরপরেই র্যাব এবায়দুলসহ সকল হত্যাকারীকে ধরতে উদ্যোগ নেয় এবং স্বল্পসময়ের মধ্যেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে, যা বাদীকে স্বস্তি দিয়েছে।
তরুণী বাদীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে সাঙ্গপাঙ্গসহ যুবদল নেতা এবায়দুলসহ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান জুয়েলের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই অর্থ না পেয়ে ১১ আগস্ট এবায়দুলের নেতৃত্বে সহযোগীরা ব্যবসায়ীর বাসায় যান এবং সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরসহ ব্যাপক ত্রাস চালিয়েছেন। এই সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে সামনে অগ্রসর হলে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে বৃদ্ধ ব্যবসায়ী সুলতান হাওলাদারকে শাবল দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু ঘটে।
বিয়োগান্তের এই ঘটনায় পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে অনাগ্রহ করলেও পত্র-পত্রিকায় মোটা দাগে সংবাদপ্রকাশ হলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। চাপের মুখে পুলিশ মামলাটি নিতে বাধ্য হলেও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম লক্ষ্যণীয় ছিল না। এতে বাদী হতাশ হয়ে র্যাবের কাছে যান এবং প্রতিকারও পান।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা পুলিশের নয়া ওসি জাকির সিকদার কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, এই আলোচিত মামলার প্রধান আসামি এবায়দুলকে র্যাব বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছে সোপর্দ করেছে। এখন বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে র্যাবের পাশাপাশি পুলিশও কাজ শুরু করছে।’