আন্তর্জাতিক
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে: মার্কিন জরিপ
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যেই মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) দাবি করলো, শেষ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মিয়ানমার। এতে দেশটির বিমানবন্দর, সেতু ও মহাসড়ক ব্যবস্থা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পাশের দেশ থাইল্যান্ডও। সেখানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার শনিবার (২৯ মার্চ) জানিয়েছে, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১,০০২ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও কম্পন অনুভূত হয়, যেখানে রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি আকাশচুম্বী ভবন ধসে পড়ে অন্তত ৯ জন প্রাণ হারান। ব্যাংককের ধসে যাওয়া ৩৩ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপে এখনও ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের মধ্যে মিয়ানমারের কর্মীরাও আছেন।
ইউএসজিএসের মডেলিং অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের অর্থনৈতিক ক্ষতি দেশটির বার্ষিক জিডিপিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল মান্দালয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, কিছু এলাকায় আগুনও লেগেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানানোর পর শনিবার মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মান্দালয় সফর করেন। রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি উদ্ধার তৎপরতা ত্বরান্বিত করতে ও জরুরি সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মান্দালয়ে বেঁচে যাওয়া লোকেরা শুক্রবার নিজ উদ্যোগে মাটি খুঁড়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেছে। ভারী যন্ত্রপাতি ও কর্তৃপক্ষের সহায়তার অভাবেই নিজেরা উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছিল অনেকে।
এই ভূমিকম্প মিয়ানমারের জন্য গত কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এরইমধ্যে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটির অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে ও লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস, সড়ক ধসে যাওয়া ও চলমান সংঘাতের কারণে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো এখনও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা পৌঁছাতে পারেনি।
মিয়ানমারের এই ভূমিকম্প পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, উদ্ধার কাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়ায় মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।