বরিশাল
বরিশালে সর্বোচ্চকে বাদ দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে দেয়া হচ্ছে খেয়াঘাটের ইজারা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে খেয়াঘাট ইজারায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন একজন ভূক্তভোগী মাঝি। তার অভিযোগ মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঘাটের ইজারা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁর এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে সরকার প্রায় ৮ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানান তিনি।
শনিবার (২২ মার্চ) বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারাদার জুয়েল হোসেন মাঝি। তিনি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জালিরচর গ্রামের সেকান্দার মাঝির ছেলে।
লিখিত বক্তব্যে জুয়েল হোসেন জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আওতাধিন ২৩টি খেয়াঘাটের ইজারা দরপত্র আহবান করা হয়। গত ১১ মার্চ দরপত্র বিক্রি এবং ১২ মার্চ জমা নেয়া হয়। এর মধ্যে ইজারা বিজ্ঞপ্তির ১৫ নম্বর ক্রমিকের “স্টিমারঘাট রাস্তার মাথা থেকে মিটুয়ার খেয়াঘাটে সরকারি ইজারা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা। এই ঘাটটি ইজারা গ্রহণের জন্য উম্মুক্ত ডাকে অংশগ্রহণ করেন চারজন। তাদের মধ্যে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হন জুয়েল হোসেন মাঝি। এছাড়া দ্বিতীয় দরদাতা ১২ লাখ ৬ হাজার, তৃতীয়জন ১০ লাখ এবং সর্বনিম্ন দরদাতা ইজারা মূল্য দিয়েছেন ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা।
জুয়েল হোসেন মাঝি বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা ঘাটের ইজারা পাবে। অথচ মেহেন্দিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মশিউর রহমান সর্বনিম্ন দরদাতা আসলামকে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকায় ইজারা দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করেছি। তিনি পাটনি সার্টিফিকেট সঠিক নয় দাবি করে সর্বোচ্চ রেখে সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঘাটের ইজারা দিচ্ছেন। তিন লাখ টাকা উৎকোচ চুক্তিতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমন অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ জুয়েল মাঝির।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর থেকে এসএম মশিউর রহমান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। একই সাথে উপজেলা পরিষদ এবং পৌর সভার প্রশাসকেরও দায়িত্বে আছেন তিনি। একসঙ্গে চারটি প্রতিষ্ঠানকেই তিনি অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবিয়েছেন। তাঁর কারণে উপজেলা এবং পৌরবাসী সঠিক সেবা পাচ্ছেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেন্দিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মশিউর রহমান বলেন, যে চারজন ঘাটের ইজারা ডাকে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দরদাতার কোনো কাগজপত্রই নেই। তাছাড়া আমরা নিশ্চিত হয়েছি সর্বোচ্চ দরদাতা জুয়েল মাঝির নাম ব্যবহার করে অন্য একজন দরপত্র জমা দিয়েছেন।
তাছাড়া সর্বোচ্চ দরদাতা ইউপি চেয়ারম্যানের পাটনি সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে সেটাও জাল। যেই চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে সেটা ওই চেয়ারম্যান দেননি বলে আমাদের জানিয়েছেন। তাই নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঘাটের ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।