সারাদেশ
আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের ২৫ স্ত্রী!
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া বুড়ির নাতি ছোট সাজ্জাদকে ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুকে লাইভে ওসি আরিফুর রহমানকে হত্যার হুমকি দেন তিনি। ওসিকে লাইভে হুমকি দেওয়ার পরপর সরব হয় র্যাব-পুলিশ।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ সিএমপির একটি বিশেষ টিম ১৫ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বুড়ির নাতি ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ভয়ংকর এই অপরাধী ছোট সাজ্জাদ পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করলে পরিণতি কী হয়, সাজ্জাদের গ্রেপ্তার তারই প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, অপরাধী যেই হোক, অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আসতে হবেই।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদের ২৫ জন স্ত্রী রয়েছেন। তার স্ত্রীরাও অপরাধের সহযোগী ছিলেন ।
গত বছরের ২১ অক্টোবর সোমবার বিকালে নগরীর চান্দগাঁও থানার শমসেরপাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন তাহসিন নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে। এর আগে একই বছরের ২৯ আগস্ট নগরীর অক্সিজেন কুয়াইশ সড়কে আনিস ও মাসুদ নামে দুই যুবককে রাতের অন্ধকারে গুলি করে হত্যা করেন আওয়ামী সরকারের স্থানীয় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আধিপত্য বিস্তার করা এই সন্ত্রাসী।
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ও বায়েজিদ এবং জেলার হাটহাজারী থানা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটান সাজ্জাদ। গত ৪ ডিসেম্বর নগরীর অক্সিজেন এলাকায় পুলিশের ওপর প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন তিনি। তার এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে আহত হন পুলিশ সদস্যসহ চারজন। এরপর সিএমপির বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমানকে হত্যার হুমকি দিয়ে দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে ওঠেন তিনি। আওয়ামী সরকারের আশ্রয়ে হৃষ্টপুষ্ট এই সন্ত্রাসীর তথ্য জানতে এরই মধ্যে অফিসিয়ালি পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি।
নগর ও জেলা পুলিশ এবং র্যাবের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৫টিরও অধিক মামলার আসামি ছোট সাজ্জাদ। বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছেন ১০ বার। সর্বশেষ গত বছরের ১৭ জুলাই অস্ত্রসহ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের চান্দগাঁও থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
কয়েক দিনের মধ্যে জামিনে বের হয়ে এসে গত ২৯ আগস্ট নগরীর অক্সিজেন কুয়াইশ সড়কে আনিস ও মাসুদ নামে দুই যুবককে রাতের অন্ধকারে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। ডাবল মার্ডারের রেশ কাটতে না কাটতেই এজাহারভুক্ত সেই আসামি ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে প্রকাশ্য দিবালোকে আফতাব উদ্দিন তাহসিন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেন।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, নগরের বায়েজিদ থানার অক্সিজেন, অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী এলাকা হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে ইট-বালু ও পাথর সাপ্লাইয়ের গ্রুপিংয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়ান সাজ্জাদ। নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে বারবার এসব হত্যা করা হয়।
স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর এবার পুলিশকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়েছে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী দাবিদার এক নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার জামাই এরেস্ট হইছে। গতকালকে রাত্রে এরেস্ট হইছে। এগুলা নিয়া হায়-উল্লাস করার কিচ্ছু নাই। মামলা যখন আছে এরেস্ট হবেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত টেনশন আর দুঃখ প্রকাশ করার কিছু নাই। আপনার যারা ভাবতেছেন আর কোনো দিন আমার জামাই বের হবে না, ওদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব। আমার জামাই বীরের বেশে চলে আসবে এবং যারা এই ঘটনা ঘটাইছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাথায় রাইখো। এত দিন আমরা পলাতক ছিলাম, এখন তোমাদের পলাতক থাকার পালা। এখন আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমার কাছে আসবে। তখনই না খেলা শুরু হবে। খেলা শুরু করছ তোমরা শেষ করব আমরা। যারা সাজ্জাদের সাপোর্টার আছো আমার জামাইর জন্য দোয়া করবা। যাতে ১০-১২ দিনের মধ্যে জামিন করাই ফেলতে পারি।’