জাতীয়
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে ২০ দিন বন্ধ বাল্কহেড চলাচল, নৌ-রুটে থাকবে বিশেষ টহল
আসন্ন ঈদুল ফিতরে নৌ পথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে আগামী ১৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের নৌরুটগুলোতে সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বাল্কহেড চলাচল। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, বরিশালের মেঘনা নদীসহ সব অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ এবং নৌবাহিনীর বিশেষ টহলের ব্যবস্থাও থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন এসব বিষয় জানিয়েছেন।
নৌ পথে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নৌ চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রস্তুতিমূলক সভায় ২৪টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে:
১. ঈদ যাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। প্রত্যেক লঞ্চের নির্ধারিত স্থানে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার রেট চার্ট প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২. ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দায়ী ব্যক্তিদের শুধু জরিমানাই করা হবে না বরং লঞ্চের রুট পারমিটও বাতিল করা হবে। কোনও অবস্থাতেই ফিটনেসবিহীন কোনো জলযান নৌপথে চলাচল করতে পারবে না।
৩. কোনো লঞ্চ বা ফেরি সিরিয়াল ব্রেক করে চলতে পারবে না। নৌ-পরিবহন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
৪. সদরঘাট বা অন্যান্য ইজারাযুক্ত লেবার হ্যান্ডেলিং ঘাট, পয়েন্টে লেবার, কুলি, পোর্টার যাত্রীদেরকে হয়রানি করতে পারবে না। কোনো অতিরিক্ত চার্জ আদায় করতে পারবে না। প্রত্যেক অনুমোদিত পোর্টার বা কুলিকে স্ব স্ব ইজারাদারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ইউনিফর্ম এবং নেইম প্লেট প্রদর্শিত থাকতে হবে। বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সংস্থাকে এ বিষয়ে তদারকি করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
৫. নৌযাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাতে চলাচলকারী লঞ্চে আনসার সদস্য নিযুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাতে চলাচলকারী দূরপাল্লাগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চারজন করে আনসার সদস্য নিয়োগের জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে বা কোনো দুর্ঘটনা হলে মালিকপক্ষ দায়ী থাকবেন। আনসার সদস্যদেরও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
৬. লঞ্চ বা ফেরিঘাটে কর্মরত স্টাফদের নির্ধারিত ইউনিফর্ম এবং আইডি কার্ড থাকতে হবে।
৭. নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, বরিশালের মেঘনা নদীসহ সব অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষ টহল থাকবে।
৮. রাতের বেলায় স্পিড বোট ১৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যন্ত দিন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। নৌ-পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি নৌবাহিনীও নৌপথের নিরাপত্তার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করবেন।
৯. ১৫ রমজান থেকে ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্মুক্ত রাখতে হবে। কোনোভাবেই রাস্তার ওপরে যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। সংশ্লিষ্ট পুলিশ বাহিনী বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করবেন। প্রয়োজনে রেকার দিয়ে অভিযুক্ত বাসগুলো সরিয়ে দিতে হবে।
১০. প্রত্যেক ঘাট এলাকায় যাত্রীদের জানমাল নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন যেমন- জেলা, উপজেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার কতিপয় দফতরগুলোর পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
১১. যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা নদী বন্দরে নির্মিত ওয়াচ টাওয়ার থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে রোস্টার ডিউটির মাধ্যমে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।
১২. লঞ্চে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) এর কপি সংগ্রহ করে টিকিট দেয়ার জন্য লঞ্চ মালিক সমিতিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
১৩. টার্মিনালগুলোতে সতর্কতামূলক বাণী ও নৌ বিজ্ঞপ্তি মাইকে প্রচার, ডিসপ্লে মনিটরে প্রদর্শন ও লঞ্চের টেলিভিশন মনিটরের প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং লঞ্চ মালিক সমিতি ও বাঅনৌচ (যাপ) সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
১৪. নৌপথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা হট লাইন নম্বর-৯৯৯ এবং যাত্রী সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর হটলাইন নম্বর-১৬১১৩ এ যোগাযোগ করবেন। সংশ্লিষ্ট নম্বর দুটি সর্বসাধারণকে অবহিত করার জন্য ব্যাপক প্রচার করতে হবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে গঠিত বিআইডব্লিউটিএর কন্ট্রোল রুমের নম্বর, হটলাইন নম্বর এবং প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা নদী বন্দর থেকে মোট দুজন কর্মকর্তার নাম, মোবাইল নম্বর ও মেইল অ্যাড্রেস আবহাওয়া অধিদফতরে পাঠানো হবে।
১৫. সদরঘাট ও লঞ্চসমূহে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন এবং জনগণকে ডাস্টবিন ব্যতীত নদীতে কিংবা পন্টুন বা গ্যাংওয়েতে ময়লা আবর্জনা ফেলতে নিরুৎসাহিত করতে মাইকিং, লিফলেট ও প্রচারণা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে করতে হবে। এছাড়া সব ঘাটের ইজারাদারকে এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বলা হয়েছে।
১৬. নৌ-পথে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য উদ্ধারকারী জলযান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
১৭. লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ঢাকা নদী বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর এলাকায় দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে সর্বদা তৎপর থেকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে এবং প্রয়োজনে ভাসমান নৌ ফায়ার স্টেশনে স্থাপন করা যেতে পারে।