জাতীয়
ইতিবাচক ঘোষণার অপেক্ষায় লাখ লাখ ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিগত বছরগুলোর এই সময়টিতে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা কয়েক গুণে বেড়ে যেত। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রতিটি সেমিস্টারের পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশিত হতো। সব শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিতে সদা ব্যস্ত থাকতো। পাশাপাশি অ্যাসাইমেন্ট ও ব্যবহারিক খাতা তৈরির জন্য ধুম পড়ে যেত। পরীক্ষা শেষে শীতের ছুটির জন্য অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা থাকতো লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এ বছরে নেই কোনো কর্মচঞ্চলতা। সবাই আজ বন্দি। তাইলে কেমন কাটছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের দিনগুলো? কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়েই এসএসসি পাসের পর হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতি বছর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়।
সরকারি ৪৯টি ও বেসরকারি ৫০৬টি ইনস্টিটিউটে বর্তমানে আসন রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে বিভাগ আছে ৩৪টি। কম্পিউটার, তড়িৎ (ইলেকট্রিক্যাল), যন্ত্রকৌশল (মেকানিক্যাল), পুরকৌশল (সিভিল) থেকে শুরু করে খাদ্য, পর্যটন, চিকিৎসা প্রযুক্তিসহ এমন কোনো প্রায়োগিক বিষয় নেই, যা পলিটেকনিকে পড়ানো হয় না। তাইতো বর্তমানে ডিপ্লোমা কোর্সের প্রতি আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে মার্চ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর কেটে গেছে প্রায় ৮ মাসের বেশি। বন্ধ ঘোষণার পর ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া সব শিক্ষাক্রমের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে অনেকটাই পরিষ্কার করা হয়েছে।
কিন্তু জানুয়ারী-জুন এক পর্বের মেয়াদ শেষ হলেও ২য়, ৪র্থ ও ৬ষ্ট পর্বের পর্ব সমাপনী পরীক্ষার ব্যাপারে এখনো কোনো ধরনের ঘোষণা দেয়া হয়নি। জুলাই-ডিসেম্বরের নতুন পর্বের মেয়াদও প্রায় শেষের পথে। এতে করে সেনশনজটের আশঙ্কায় রয়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। দীর্ঘ সময় বাসায় নিসঙ্গ জীবন ও পরীক্ষার কোনো নোটিশ না আসায় হতাশায় সকল শিক্ষার্থী। ডিপ্লোমা পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্য ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগ টিউশন ও অন্যান্য কাজ করে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে হয়। করোনা মহামারির কারণে কর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা। তাই অতি দ্রুত দাবিগুলো পূরণে সরকারের কাছে আবেদন করছে শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- সেশনজট কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। হাতে-কলমে ক্লাস ছাড়া পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক নয়।
অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থীদের দ্রুত মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ও ফল প্রকাশ, দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ পর্বের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দ্রুত পরীক্ষা বাস্তবায়ন, সব পাবলিক পরীক্ষার মতো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রকাশ ও কারিগরি শিক্ষার মনোন্নয়নে দ্রুত যুগপোযোগী পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে। খুব শিগগিরই পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করে ইতিবাচক ঘোষণার অপেক্ষায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী। নতুন অনেক পরীক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষাকার্যক্রম থেকে অকালেই ঝরে যেতে পারে।