আগৈলঝাড়া
আগৈলঝাড়ায় শিশুশিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, অভিযোগের তীর সৎমায়ের দিকে
রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির সৎ মা ও বাবা এই বিয়োগান্তের ঘটনাটিকে আত্মহত্যা দাবি করলেও এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানান প্রশ্নে জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রাম শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহার (৮) লাশটি বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের জন্য বরিশালে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে বুধবার দুপুরে তাকে ঘরের অভ্যন্তরে আড়ার সাথে ঝুলতে দেখে বাবা সুমন মিয়া উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীর সৎ মা ও তার বাবা সুমন মিয়ার দাবি- স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর শিক্ষার্থী নোহা মাসিক অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হলে বুধবার (০৯ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক তাকে ক্লাস রুমে বেত্রাঘাতসহ গালমন্দ করেন। ওই শিক্ষকের বাড়ি পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে। সহপাঠীদের সামনে মারধরের ঘটনায় নোহা অভিমান করে বুধবার দুপুরে বাড়ি এসে নিজেদের ঘরের দোতলার আড়ায় ওড়নার পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তাকে ঝুলন্ত অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিক নামিয়ে স্থানীয় পয়সা ক্লিনিকে নিলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সৎ মা ও বাবার এমন দাবি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি পুলিশও বিষয়টিকে প্রাথমিকভাবে রহস্যজন মনে করছে। বিশেষ করে নোহার গর্ভধারিনী মা তানিয়া বেগম তার মেয়েকে সৎ মা ইতিপূর্বে একাধিক নির্যাতন করার ঘটনা বর্ণনা করলে এতে এই প্রাণবিয়োগের ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মায়ের অভিযোগের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নোহার বাবা সুমন মিয়া বর্তমানে চার নম্বর স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন। নোহা ওই পরিবারের সৎ মায়ের ছিল চক্ষুশূল ছিল। এমনকি আপন দাদা-দাদীর কাছেও ছিল অবহেলিত। মেয়ে মৃত্যুর এই ঘটনায় তানিয়া বেগম সতীন, স্বামী, শশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনেছেন এবং থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় প্ররোচরনাকারী হিসেবে নোহার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইকের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ করেছেন বাবা সুমন মিয়া। এর পর থেকে ওই শিক্ষক পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। মেয়েটির মা ও তার বাবা উভয়ের অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি আসলেই রহস্যজনক। এছাড়া স্কুলে শিক্ষক যে তাকে মারধরসহ গালমন্দ করেছে, এই বিষয়টি সত্য। ফলে বিভিন্ন দিন মাথায় রেখে মামলাটি তদন্ত করতে হচ্ছে। এদিকে থানা পুলিশের ওই সূত্রটি জানায়, স্কুলছাত্রীর আপন মা তানিয়া মেয়ের মৃত্যু জন্য সরাসরি তার সতীন ও শ্বশুর-শাশুড়িকে দায়ী করেন। তার অভিযোগে বলা হয়েছে, এই তিনজন নোহাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পরে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। নোহার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার মা ঢাকা থেকে বুধবার রাতেই থানায় ছুটে আসেন এবং একটি অভিযোগ করেন। শিশু শিক্ষার্থী মৃত্যুর এই ঘটনাটি আসলেই রহস্যজন মন্তব্য করে থানার ওসি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসার আগ পর্যন্ত এ সংক্রান্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে দুটি অভিযোগ হাতে রেখে তদন্ত করে বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে কারও হাত থাকলে বা মা-বার দুটি অভিযোগের একটির প্রমাণ মিললে সেভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’