বরিশাল
অল্প বয়সী বোট চালকের কারণেই কীর্তনখোলায় স্পিডবোট দুর্ঘটনা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে বাল্কহেড-স্পিডবোটের সংঘর্ষের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের সদস্যরা এখনও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বাদী হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে নৌ-পুলিশ।
ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, বোট চালক অল্প বয়সী হওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব খবর পাওয়া গেছে। স্পিডবোট চালককে নিয়ে অভিযোগটি করেছেন হাসপাতালে ভর্তি আহত পুলিশ কনস্টেবল মানসুর আহমেদ। তিনিও ঘটনার দিন আহত হয়েছিলেন।
স্পিডবোট চালকের দক্ষতা নিয়ে ভুক্তভোগী ও নিখোঁজদের স্বজনরা প্রশ্ন তুলেছেন জানিয়ে মানসুর বলেন, স্পিডবোটের চালক অল্প বয়সী ছিল। সে ছাড়া বোটে দশজন যাত্রী ছিল। দুর্ঘটনার সময় চালক নিজেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলছিল। তখনই একটি বাল্কহেড বোটের সামনে এসে পড়ে। পরিস্থিতি এমন ছিল, স্পিডবোটের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সেটি পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় যে যার মতো জীবন বাঁচাতে নদীতে ঝাপ দেন।
নিখোঁজদের স্বজনরাও দুর্ঘটনা কবলিত স্থান ও ফিরে আসা জীবিত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে একই তথ্য জেনেছেন। চালকের বয়স কম ও তার খামখেয়ালিপনার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।
নিখোঁজ সজল দাসের স্বজনরা জানান, বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা তাদের বলেছেন, দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে ভাড়া না তুললে হয়ত এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো না। ভাড়া যাত্রা শুরুর আগে ঘাটে বা যাত্রা শেষ হওয়ার পর ঘাট থেকে নেওয়া যেত।
এ রুটের নিয়মিত যাত্রীরা বলেন, বোট চালক ও শ্রমিকদের কাছে তারা জিম্মি। বেপরোয়া চালনা, নিম্নমানের লাইভ জ্যাকেট ব্যবহার ও মাঝ নদীতে ভাড়া আদায় নিয়মিত ঘটনা। কোনো কিছু নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের লাঞ্ছনা করা হয়।
আশিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, এ রুটের বোটগুলোর বেশিরভাগই পুরনো। মাঝ নদীতে ইঞ্জিনে ত্রুটিও নিয়মিত দেখা দেয়। এ নিয়ে কথা বললে ঘাটে পৌঁছলে যাত্রীদের হয়রানি করা হয়। নিম্নমানের লাইফ জ্যাকেটগুলো বাড়তি ওজনের জন্য কেউ নিতে চায় না, কিন্তু যাত্রীদের কোস্টগার্ডের ভয় দেখানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিনের পাশাপাশি রাতেও এ রুটে স্পিডবোট চলাচল করে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার পর অল্প বয়সী চালকদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তারা বোট চালনায় অভিজ্ঞ কিনা তাও বোঝার উপায় নেই। আর এসব অনিয়ম রোধে কখনো ব্যবস্থাও নিতে দেখা যায় না বিআইডব্লিউটিএসহ প্রশাসনকে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাল্কহেড ও স্পিডবোটের সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়েছে। বরিশাল সদর নৌ-থানার এসআই ওমর ফারুক জানান, মামলায় নামধারী দুজন ও অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। নামধারীদের মধ্যে স্পিডবোট চালক আল-আমিন ও বাল্কহেড চালক আটক শরিয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানার কোরালতলী এলাকার বাসিন্দা খালেক মাঝি।
ওই দুর্ঘটনায় এখনও তিনজন নিখোঁজ। তারা হলেন- ভোলার উত্তর চর ভেদুরিয়া এলাকার বাসিন্দা স্পিডবোট চালক মো. আল আমিন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোওয়াপাড়া এলাকার আজগর আলির ছেলে রাসেল আমিন (২৫) ও বাবুগঞ্জের রহমতপুরের দুলাল দাসের ছেলে সজল দাস (৩০)।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কীর্তনখোলা নদীর লাহারহাট খালের প্রবেশমুখে জনতার হাট এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। সংঘর্ষের পর নদী থেকে উদ্ধার জালিস মাহমুদ (৫০) নামে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। আহত হন ভোলার দৌলতখান থানার কনস্টেবল মানসুর আহমেদ।
ডুবে যাওয়া স্পিডবোট উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা কারও সন্ধান পায়নি। ডুবে যাওয়া স্পিডবোট উদ্ধার করা হয়েছে।