টপ নিউজ
দোকানের ভেতর পেট্রোল পাম্প, আতঙ্কে এলাকাবাসী
রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ বরিশাল নগরীর অলিগলি থেকে জেলা-উপজেলাগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বোতলে বোতলে জ্বালানি তেল ডিজেল পেট্রোল ও অকটেন বিক্রির দৃশ্য দেখা যায় হরহামেশাই। এ কারণে বহু দুর্ঘটনা ঘটলেও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি যথাযথ কর্তৃপক্ষের।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানাধীন ১০নং ওয়ার্ড স্টিমারঘাট এলাকায় অবৈধভাবে দোকানের ভেতরে পেট্রোল পাম্প বসিয়েছে এক তেল ব্যবসায়ী। এতে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রয়োজনীয় জনবল ও ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়।
এদিকে চলমান বিএনপির অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হচ্ছে এই খোলা বোতলের পেট্রোল বোমা। গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকাসহ বেশকিছু বিভাগ ও জেলায় গণপরিবহনে পেট্রোল বোমার মাধ্যমে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
ফাঁকা জায়গাকে টার্গেট করে এই বোমারুরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে। পাশাপাশি এসব অপরাধী খুব সহজেই প্রকাশ্যে পেট্রোল বোমার সরঞ্জামাদি পাচ্ছে হাতের নাগালেই।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর লঞ্চঘাট খেয়াঘাট এলাকায় মেসার্স মিশু এন্টারপ্রাইজ নামে একটি স্টলে পেট্রোল পাম্প বসিয়ে অবৈধ পন্থায় হোন্ডা ও বোতলে পেট্রোল বিক্রি করছে।
একটি বোতলভর্তি পেট্রোল নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। বোতলে করে কেন পেট্রোল নিচ্ছেন জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি জানান, তার এক বড় ভাই বোতলে করে পেট্রোল নিতে বলেছেন। তাই তিনি দোকান থেকে পেট্রোল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
দোকানগুলোতে ড্রাম ও বোতলভর্তি কয়েকশ লিটার পেট্রোল ও অকটেন মজুদ রয়েছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত আইন অনুসারে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না। লাইসেন্স ছাড়া পেট্রোলিয়াম আমদানি, মজুত, পরিবহন, বিতরণ, উৎপাদন, শোধন ও মিশ্রণসহ আইনের কোনো ধারা বা লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘনকারীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
অথচ বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে, এমনকি কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, বরিশাল জেলায় ২৯টি (ট-ফরম) পেট্রোল পাম্পের জ্বালানি তেল বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (এম-ফরম) পেট্রোলিয়াম বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের।
পাশাপাশি আরও ৪২টি প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় শ্রেণির (ঝ-ফরম) পেট্রোলিয়াম বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া (চ-ফরম) এলপিজি সিলিন্ডার ও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন রয়েছে ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের।
এ ব্যাপারে বিস্ফোরক পরিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক বিনয় কুমার মণ্ডল বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল ও ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম পেলে তাদের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
এদের অফিসে যোগাযোগ করে অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকার মিশু এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করছে। তবে তাকে দোকানের ভেতর ট্যাংক বসিয়ে পেট্রোল পাম্প তৈরি বা বিক্রির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
বরিশাল জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) প্রফেসর (অব.) শাহ সাজেদা অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তখন কিছু করার থাকবে না।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চলমান অবরোধে নগরীতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে আমাদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের টিম। নগরীতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। এছাড়াও পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে একটি মিটিং করা হয়েছে। সেখানে তাদেরকে খোলা তেল বিক্রিতে নিষেধ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, শুধু সচেতন করার বাণী শুনিয়ে লাভ নেই। নিজেদেরও সচেতন হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নগরীতে যারা ডিলার অনুমোদন নিয়ে তেল বিক্রি করে প্রথমত তাদের সচেতন হতে হবে। কারণ আমরা যখন এসব বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করতে মাঠে যাই তখনি তারা সবকিছু লুকিয়ে রাখে। তবে আপনাদের ভিডিও, তথ্য প্রমাণসহ এদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দোকানের মালিক আলাউদ্দীন আলো বলেন, আমার সকল ধরনের কাগজপত্রে অনুমোদন আছে। তবে বিস্ফোরক কর্মকর্তা জানান, আলাউদ্দীন আলো একটি আবেদন করছে, তবে আমরা তাকে পেট্রোল পাম্প তৈরির অনুমতি দেইনি।