অভাবের কারণে দুই সন্তানকে দত্তক দিলেন হতদরিদ্র বাবা-মা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:০৮, জুন ০৫ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ অভাবের কারণে দুই সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার এক হতদরিদ্র বাবা-মা। শিশু দুটির বাবা পেশায় একজন দিনমজুর। তিনি বলছেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই দুই সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন। উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের টেমার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। সন্তান দুটিকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযাগিতা কামনা করেছেন এ দম্পতি। স্থানীয়রা জানান, টেমার গ্রামের সুধাংশু বাড়ৈ স্থানীয় একটি পানের বরজে দিনমজুরের কাজ করেন। পানের বরজে কাজ করে সামান্য উপার্জন দিয়ে তার সংসার চলে। তার সংসারে সদস্য সংখ্যা চারজন। এরই মধ্যে গত ৩১ মে তার স্ত্রী কল্পনা ঢাকী একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। অভাবের সংসারে শিশুটির ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন বাবা সুধাংশু বাড়ৈ ও মা কল্পনা ঢাকী। পরে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নবজাতক ছেলে সন্তানকে ৩ জুন তুলে দিয়েছেন অন্যের কোলে। এর আগে গতবছর আরও এক ছেলে সন্তান জন্ম দেন কল্পনা ঢাকি। সেই সন্তানকেও তারা দত্তক দিয়েছেন। বর্তমানে এ দম্পতির ঘরে আরও দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। সুধাংশু বাড়ৈর কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, কল্পনা সুধাংশু বাড়ৈর দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান না হওয়ায় তিনি অন্যের কাছ থেকে একটি ছেলেকে দত্তক আনেন। প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর ৮ বছর আগে কাঠিরা গ্রামের কল্পনাকে বিয়ে করেন সুধাংশু বাড়ৈ। এরপর তাদের সংসারে পরপর দুটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। গতবছর তার স্ত্রী আবারও একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। এরপর গত ৩১ মে আবারও একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন কল্পনা। পরে ৩ জুন তার স্ত্রীর এক নিকটাত্মীয় নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দেন ওই নবজাতককে। এর আগে গতবছর জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তানকে তাদের স্বজনদের মাধ্যমে এক দম্পতির কাছে দত্তক দিয়েছেন। সুধাংশু বাড়ৈ  বলেন, ‘একসময় সন্তান না হওয়ার কষ্ট ছিল। প্রথম স্ত্রী ঘরে সন্তান না হওয়ায় অন্যজনের সন্তান দত্তক নিয়েছিলাম। সেই ছেলে এখন কলেজে পড়ে। কল্পনাকে বিয়ের পর সন্তান না হওয়া কষ্ট-বেদনা দূর হয়েছে। তবে সংসারের অভাব জেঁকে বসেছে। পানের বরজে কাজ করে যে সামান্য টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। আমার একার আয়ে পরিবারের সদস্যদের তিনবেলা খাবার জোটে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বসতভিটা ছাড়া আমার কোনো জমিও নেই যে চাষাবাদ করে বাড়তি আয় হবে। থাকার ঘরটিও জরাজীর্ণ। এ অবস্থায় অভাবের সংসারে সন্তানদের ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তাই দুই সন্তানকে দত্তক দেওয়া ছাড়া পথ খোলা ছিল না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দুই ছেলে সন্তানকে দত্তক দিয়েছি।’ তবে সরকার থেকে যদি আর্থিক সহায়তা করা হয় তাহলে দত্তক দেওয়া দুই সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে চান হতদরিদ্র এ বাবা। সুধাংশু বাড়ৈর স্ত্রী কল্পনা ঢাকী বলেন, ‘অভাবের সংসারে ছেলেটা জন্ম নিলো। নিজেদের খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই। সন্তানকে যে দুধ কিনে খাওয়াবো সে সামর্থ্যও আমাদের নেই। সন্তান বুকের ধন। সেই বুকের ধনকে অন্যের কোলে তুলে দেওয়া যে কত বেদনা, কত কষ্টের তা বলে বোঝাতে পারবো না। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দুই সন্তানকে দত্তক দিতে হয়েছে।’ এ বিষয়ে গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল হোসেন টিটু বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার তরিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলবেন। গৈলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার তরিকুল ইসলাম  বলেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে টেমার গ্রাম। ওই গ্রামে কেউ শিশু দত্তক দিয়েছেন কি না তা তার জানা নেই। তিনি এখন একটি সভায় রয়েছেন। সভা শেষ হলে খোঁজ নেবেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। দরিদ্র পরিবারটির জন্য সরকারিভাবে যতটুকু করা সম্ভব, তা করা হবে।