হাসপাতালে কমলেও ক্লিনিকে বাড়ছে সিজার

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:০৭, ডিসেম্বর ২৮ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে প্রসূতিদের সিজারিয়ান অপারেশন কমলেও ক্লিনিকে বেড়েছে। নিরাপদ মাতৃত্বের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশন নিরুৎসাহিত করা হলেও এ বিষয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলে অভিযোগ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে ১১ জনের। একই সময় নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ২০ প্রসূতির। অক্টোবরে সিজারিয়ান ১৪ এবং নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১৮ জনের। নভেম্বরে সিজারিয়ান অপারেশনের সংখ্যা ১৪। ওই মাসে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ২০ জনের। ঝালকাঠি সরকারি হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি বাড়লেও ভিন্ন চিত্র ক্লিনিকে। সদর হাসপাতাল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ঝালকাঠি মডেল ক্লিনিক। সেখানের প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে ৪৫ জনের সিজারিয়ান অপারেশন হলেও নরমাল ডেলিভারি হয়েছে চারজনের। অক্টোবরে সিজারিয়ান অপারেশন ৬৭, নরমাল ডেলিভারি দুজন এবং নভেম্বরে সিজারিয়ান অপারেশন ৫৪, নরমাল ডেলিভারি একজনের। এছাড়া চলতি ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখ (বিকেল ৪টা পর্যন্ত) সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে ৩৪ জনের। এসময়ে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে একজনের। সদর হাসপাতালের পূর্বগেট সংলগ্ন স্কয়ার ক্লিনিক, ফায়ার সার্ভিস মোড়ের সদর পুলিশ ফাঁড়ি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সিটি ক্লিনিক, সদর উপজেলা পরিষদ গেট সংলগ্ন মৌমিতা ক্লিনিক থেকে এ-সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, এ চারটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত গত চারমাসে গড়ে সিজারিয়ান হয়েছে ৪০টিরও বেশি। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে সপ্তাহে তিনদিন সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। এতে বেকায়দায় পড়তে হয় তাদের। হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করতে চাইলে নির্ধারিত দিনের তিনদিন আগে ভর্তি হতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে ছুটতে হয় তাদের। স্থানীয় মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন রোগীরা স্পর্শকাতর থাকেন। গুরুতর অবস্থায় কোনো রোগী এলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগ খোলা থাকে। কিন্তু জরুরি অপারেশনের ব্যবস্থা নেই সদর হাসপাতালে। তখন বাধ্য হয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া প্রতি সপ্তাহের শনি, বুধ ও বৃহস্পতিবার অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু থাকে। নির্ধারিত সময়ের আগের দিন ভর্তি না হলে তার অপারেশন করা হয় না।’ সরেজমিন সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ‘শনি, বুধ ও বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয় না’—অপারেশন থিয়েটারের সামনেই টিনের হলুদ বোর্ডের ওপর লাল অক্ষরের সাইনবোর্ডে দেওয়া আছে এমন নির্দেশনা। এতে একদিকে যেমন ওই তিনদিনের বাইরে অপারেশন করা হয় না, অন্যদিকে চিকিৎসক অপারেশনে গেলে বহির্বিভাগের রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পান না। ফলে মাতৃত্বকালীন রোগী ও চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের রোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টায় যদি কোনো মাতৃত্বকালীন রোগী হাসপাতালে আসেন আর তার অবস্থা গুরুতর হয় তাহলে ওই রোগী এবং স্বজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন কর্মচারী জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী হয়েও তিনি স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন ক্লিনিকে করিয়েছেন। কারণ হিসেবে জানান, হাসপাতালের পরিবেশ এবং সেবার মান ভালো না। দক্ষ জনবল থাকলেও রোগীর প্রয়োজনে যথাসময়ে তাদের ডাকলে (চিকিৎসকদের) তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। রোগীর বিছানা, টয়লেট অপরিষ্কার থাকে। এতে রোগীর অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়ে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী  বলেন, শুধু সিজারিয়ানই নয়, অন্যান্য অপারেশনও এখানে করা হয়। আর অত্যন্ত দক্ষ জনবল দিয়ে এসব অপারেশন করা হয়। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নির্ধারিত সময়ের বাইরে অপারেশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আড়াইশ বেডের হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। এটার কাজ শেষ হলে সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা থাকবে।