৪৫ মিনিট সাঁতার কেটে বেঁচে ফিরলেন দগ্ধ কুশল

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৩৮, ডিসেম্বর ২৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ঢাকা গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কুশল কর্মকার। ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে গ্রামের বাড়ি বেতাগীতে রওনা দেন কুশল। লঞ্চে আগুন লাগার পর চোখের সামনে মানুষ পুড়ছে, নিজের শরীর আগুনের তাপে দগ্ধ হচ্ছে ঠিক তখনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দগ্ধাবস্থায় মাঝ নদীতে ঝাঁপ দেন কুশল কর্মকার (২২)। কনকনে শীতের মধ্যে সুগন্ধা নদীতে একটানা ৪৫ মিনিট সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে ফিরেন কুশল। মৃত্যুপুরী থেকে ফিরে আসা কুশলের বলা বর্ণনায় জানা যায় অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার মর্মন্তিক ঘটনা। তিনি জানান, মাঝরাতে হঠাৎ বিকট শব্দ, মানুষের চিৎকার ও ছোটাছুটিতে ঘুম ভাঙে তার। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। চোখের সামনে অনেকের শরীরে আগুন জ্বলছিল। অনেক মায়ের কোলে শিশু থাকায় ও সাঁতার না জানার ভয়ে লঞ্চ থেকে লাফিয়েও পড়তে পারেনি। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যারা সাঁতার না জেনেও নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে, তাদের অনেকেই পানিতে ডুবে মারা গেছে। লঞ্চটিতে ছিল না কোনো সুরক্ষাসামগ্রী এমনকি লাইফ জ্যাকেটও না; যার ফলেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, যখন আগুনের উত্তাপে আর থাকতে পারছিলাম না তখন পোশাক খুলে ফেলি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাফ দেই মাঝ নদীতে। এরপর একটানা ঘণ্টাব্যাপী কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে নদীতে সাঁতার কাটতে থাকি। এমন সময় তেলবাহী জাহাজ যাচ্ছিল আমার পাশ দিয়ে। ঠাণ্ডায় মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। শুধু হাত দিয়ে ইশারা করি। ইশারা বুঝে জাহাজে তুলে নেয় আমাকে। তিনি জানান, জাহাজের লোকজন গরম পোশাক পরতে দেয়। উদ্ধারকর্মীরা পরে হাসপাতালে নিয়ে যান। তার বাবাকে ফোনে দুর্ঘটনায় কথা জানালে পর দিন শুক্রবার সকালে বাবা আমায় ঝালকাঠি হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, চোখে না দেখলে বলে বুঝাতে পারব না সেদিন রাতের মৃত্যুপুরীর যন্ত্রণা। আজীবন মনে থাকবে। ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়েছেন। রোববার বিকালে কুশলের বাবা কৃষ্ণ কর্মকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছে ঈশ্বর, ঈশ্বর বাঁচালে কেউ মারতে পারে না। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রায় চারশ যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছলে রাত ৩টার দিকে এতে আগুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। লঞ্চ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে।