জন্মনিবন্ধন জটিলতায় স্কুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারছে না হাজারো শিক্ষার্থী

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:২৮, ডিসেম্বর ০১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের অব্যবস্থাপনা ও সার্ভার ডাউনের গ্যাড়াকলে একটি বছর পিছিয়ে যেতে পারে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জীবন থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদনে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলেও অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে নাগরিকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে বরিশালসহ সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেক অভিভাবক এখনো তাদের সন্তানদের জন্য স্কুলে ভর্তির আবেদন করতে পারেনি। এনিয়ে দুঃচিন্তা ও সংশয়ে রয়েছেন অভিভাবকরা। কারন বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর দিয়েই আগে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ ছিল। তবে এখন নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে। সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে বাবা-মায়ের এনআইডির পাশাপাশি জন্মনিবন্ধন নম্বরও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সিটি করর্পোরেশনে জন্মসনদ সংগ্রহে আসা অনেক ভুক্তভোগী জানান, সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহের জন্য বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন বাবা ও মায়েরা। কেননা ছেলে বা মেয়ের জন্মসনদের আবেদন করলে সেখান থেকে বলা হচ্ছে সন্তানের জন্মসনদ নেয়ার জন্য আগে বাবা ও মা দু’জনেরই ডিজিটাল জন্মসনদের কপি বা নিবন্ধন নম্বর লাগবে। আবার বাবা এবং মায়ের জন্মসনদের জন্য আবেদন করা হলে তাদের বাবা-মারও জন্মসনদও চাওয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে কেউ মারা গেলে তাদের মৃত্যু সনদও জমা দিতে বলা হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, কার্যালয়ে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও দিচ্ছেন না। এমন ভোগান্তির পাশাপাশি যোগ হয়েছে সার্ভার বিড়ম্বনা। প্রতিদিনই সার্ভার ডাউনের কথা জানাচ্ছে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা। গত ছয় মাস ধরেই দেখা গেছে এমন চালচিত্র। জানা গেছে, জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে করার জন্য পুরানো সার্ভার থেকে নতুন সার্ভারে নেয়া হয়েছে। আর এই ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে সার্ভার জনিত কারিগরি জটিলতা। ফলে জন্ম নিবন্ধন করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেককেই সনদ না নিয়ে ফিরে যেতে হয়। বিশেষ করে নতুন বছরে স্কুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এ নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। মেয়েকে স্কুলে ভর্তির আবেদনে জন্ম নিবন্ধনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের অফিসে দুদিন গিয়ে ফিরে আসতে হয় ব্যবসায়ী সুমন সিকদারকে। তিনি বলেন, ব্যবসা ফেলে রেখে এখানে দুই দিন ধরে ঘুরছি। প্রতিদিনই শুনি সার্ভার ডাউন। রোজ রোজ কীভাবে আসি? আবার এদিকে জন্ম নিবন্ধন না পেলে মেয়ের ভর্তির জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জন্মনিবন্ধন নিতে আসা আরিফুর রহমান বলেন, প্রায় এক মাস ধরে সিটি কর্পোরেশনের এনেক্স ভবন আর ডিসি অফিসে চেষ্টা করছি কিন্তু জন্মসনদের দেখা মেলেনি। তিনি আরো বলেন, যদি প্রতিদিনই সার্ভার ডাউন থাকে তাহলে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন করার কি দরকার? হাতে লেখাই ভালো ছিলো। এমন অভিযোগ করেন এনেক্স ভবনে উপস্থিত থাকা একধিক ভুক্তভোগী। তবে সার্ভার ডাউন ও জনবল সংকটের কারনে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, আমরা সব সময়ে জনগনকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করি। তবে মাঝে মাঝে সার্ভার ডাউন এবং জনবল সংকটের কারনে জন্মনিবন্ধনে কিছুটা কষ্ট পোহাতে হচ্ছে সাবাইকে। তবে শিগ্রই এ সমস্যার সমাধান করা হবে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুখ বলেন, বিসিসি মেয়র প্রতিনিয়ত জন্মনিবন্ধনের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। সার্ভার ডাউনেরে কারনে কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের সকল এলাকায় ভর্তি শুরু হয়েছে আর একারনে একই সাথে সবাই জন্মনিবন্ধন করতে আসছে। ফলে সার্ভারে অতিরিক্ত চাপ পরছে। তবে শিগ্রই এসমস্যার সামাধান করা হবে।