নগরীতে সন্ত্রাসী ঢুকলেই বাজবে অ্যালার্ম

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:২৭, নভেম্বর ২৪ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ নগরবাসীর নিরাপত্তা এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের শনাক্তকরণসহ যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে ৫৪ কিলোমিটার এলাকাকে হাতের মুঠোয় এনেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)। একটি কক্ষ থেকে ৫৪ কিলোমিটার এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ জন্য বসানো হয়েছে ২২৫টি সিসি ক্যামেরা এবং ফেস ডিটেকশন ও ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের পিটিজেড সিসিটিভি ক্যামেরা। ডাটাবেজে থাকা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসী নগরীতে ঢুকলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম দেবে ফেস ডিটেকশন ক্যামেরা। এতে অপরাধ প্রবণতা কমবে। সেই সঙ্গে অপরাধীরাও ধরা পড়বে। শুধু অপরাধী নয়, এই কক্ষ থেকে বিএমপির অধীন থানায় সেবা প্রদান এবং মাঠপর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রমও পরিচালিত হবে। এসব কার্যক্রম সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে বরিশাল পুরাতন পুলিশ হাসপাতালের একটি কক্ষে গঠন করা হয়েছে ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’। মেট্রোপলিটনের ক্রাইম অপারেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন শাখার অধীনে এই সেন্টার কাজ করছে। ইতোমধ্যে সফলতা আসতেও শুরু করেছে। প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত সিসি ক্যামেরাসহ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় গত ২৭ জুন। তবে গত ১৭ নভেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, সহকারী কমিশনার ও পরিদর্শকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা কন্ট্রোল সেন্টার নজরদারি করছেন। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছেন পুলিশের নয় জন প্রশিক্ষিত সদস্য। বরিশাল নগরী থেকে শুরু করে সদর উপজেলা এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বিএমপি। ৪৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৫৪ কিলোমিটার এলাকা ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পর্যায়ক্রমে ৩৭৬ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। পুলিশ জানায়, নগরীর ৫৪ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ২২৫টি সিটি ক্যামেরা। দুটি বাস টার্মিনাল এবং নদী বন্দর এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের তিনটি পিটিজেড ক্যামেরা। সন্দেহজনক কিছু দৃষ্টিগোচর হলে কন্ট্রোল সেন্টার থেকে ওই ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরিয়ে বিষয়টি গভীরভাবে নজরদারি করতে পারবেন দায়িত্বরতরা। এ ছাড়া নগরীর আটটি প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে আটটি ফেস ডিটেকশন ক্যামেরা। চিহ্নিত অপরাধী কিংবা সাজাপ্রাপ্ত কোনও পলাতক আসামি আটটি প্রবেশপথে নগরীতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ফেস ডিটেকশন ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত দেবে। ওই সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল কক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানা অথবা আশেপাশে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের অবহিত করলে আসামিকে গ্রেফতার করা হবে। তবে তা অবশ্যই কন্ট্রোল রুমের ডাটাবেজে থাকতে হবে। ক্রাইম অপারেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন শাখার দায়িত্বরত অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. রাসেল বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার। কোথাও কোনও অপরাধ সংঘটিত কিংবা অবৈধ জনসমাগম এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পারবে কন্ট্রোল সেন্টার। তাৎক্ষণিকভাবে ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও টহলরত পুলিশ। ফলে নগরবাসীর নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধী শনাক্তকরণ সহজ হবে। কন্ট্রোল সেন্টারের মনিটরিংকর্মী ওসমান গণি ও প্রকল্প বাস্তবায়নকর্মী অজিত হালদার বলেন, সব কাজ ঠিকঠাকভাবেই চলছে। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে যখন ইন্টারনেটের গতি কমে আসে। তখন নজরদারিতে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা চলছে। এটি সমাধান হলে বিএমপির অধীন সমস্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে কোনও ধরনের বেগ পেতে হবে না। বিএমপি পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, নগরবাসী ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সুফল পেতে শুরু করেছে। শিগগিরই আরও ৫০০টি সিসি ক্যামরা স্থাপন করা হবে। বিএমপির অধীন সম্পূর্ণ এলাকাকে পর্যায়ক্রমে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার কাজ চলছে। পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, অপরাধী শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার ছাড়া পুলিশের সদস্যদের কার্যক্রমও পরিচালনা করা হবে। থানায় যাতে কাউকে দুর্ভোগ পোহাতে না হয় এবং যেকোনও স্থানে মানুষ যাতে পুলিশ দ্বারা কোনোভাবে হয়রানি না হয়, সে বিষয়গুলোও নজরদারি করা হবে। এতে করে বিএমপির অধীন থাকা এলাকাবাসীর সেবাও সহজ হবে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে চুরি, ছিনতাইসহ অর্ধশতাধিক অপরাধের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে।