ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা আমনচাষি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:২৩, নভেম্বর ২৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের কৃষক আইয়ুব আলী হাওলাদার জানান, ফসলের মাঠে সামান্য পানি জমা আছে। এই পানিতে নেমে ইঁদুর শিষ কেটে শেষ করছে। ইঁদুর নিধনে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করেও তারা কিছুতেই আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। বরগুনায় রোপা আমনের ক্ষেতে বিপজ্জনক পর্যায়ে বেড়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। এরই মধ্যে হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের শিষ কেটেছে ইঁদুর। কৃষকদের নিয়ে কৃষি বিভাগ সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করেও দমন করতে পারছে না ইঁদুর। কষ্টের ফসলের শিষ কেটে ফেলায় মহাবিপাকে কৃষক। তেমনি আমন ফসলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে মনে করছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের (খামার বাড়ি) তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় এ বছর মোট ৯৮ লাখ ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ৯৮ লাখ ৯৪০ হেক্টরে। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ২৫ হাজার ৪০০, আমতলীতে ২৩ হাজার ৩৭১, তালতলীতে ১৬ হাজার ২৩০, বেতাগীতে ১০ হাজার ৬৯২, বামনায় ৬ হাজার ৩৩০ ও পাথরঘাটা উপজেলায় ১৬ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল ও স্থানীয় জাতের আমনের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের প্রধান ফসল রোপা আমন। বিভিন্ন এলাকার আবাদি মাটি গবেষণা করে কৃষকদের বীজ দিয়ে সহায়তা করে কৃষি বিভাগ। এই জেলার ৫৫ ভাগ জমিতে বি-আর, ব্রি-ধান ও বিনা এই তিন জাতের উফশী আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ৪৫ ভাগ জমিতে স্থানীয় জাতের রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ আরও জানায়, নভেম্বর মাসে সাধারণত আমনের শিষ ধরতে শুরু করে। আর শিষ ধরার পরই ইঁদুরের উপদ্রব শুরু হয়। কৃষকরা জানান, এ বছর ইঁদুরের উপদ্রব অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এরই মধ্যে হাজার হাজার হেক্টর জমির আবাদি রোপা আমনের শিষ কেটেছে ইঁদুর। বরগুনা সদর উপজেলার ক্রোক বৈঠাকাটা এলাকার কৃষক আলম মিয়া জানান, তিনি মৌসুমে চার একর জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছেন। শিষ আসতেই ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে যায়। জমির এক-তৃতীয়াংশ ফসলের শিষ কেটে নষ্ট করেছে ইঁদুর। ঠিক একই অবস্থা এলাকার কৃষক শাহজাহান, মজিদ, আফজাল, কুদ্দুস ও কামালসহ এলাকার প্রায় সব আমনচাষির। পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের কৃষক আইয়ুব আলী হাওলাদার জানান, ফসলের মাঠে সামান্য পানি জমা আছে। এই পানিতে নেমে ইঁদুর শিষ কেটে শেষ করছে। ইঁদুর নিধনে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করেও তারা কিছুতেই আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সাধারণত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। আবার ভাটিতে নেমে যায়। এতে ক্ষেতে সামান্য পানি জমে থাকে। ওই ক্ষেতগুলোতেই ইঁদুর আক্রমণ করে। তিনি আরও বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে শুরু করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত কৃষি বিভাগের ইঁদুর নিধন অভিযানে মোট ৩ লাখ ২৮ হাজার ২১৩টি ইঁদুর মারা পড়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে ফাঁদ ও রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ইঁদুর নিধন করেছি। ‘আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। তা না হলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে।’