আমতলীতে গাছতলায় বিদ্যালয়ে পাঠদান

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪৫, অক্টোবর ১০ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিদ্যালয় ভবন ভেঙে পড়ায় বরগুনার আমতলীর একমাত্র শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে গাছতলায়। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে কোমলমতি শিশুরা গাছতলায় ক্লাস করছে। দ্রুত বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। জানা গেছে, উপজেলার ঝড়ে পড়া, অসহায়, শিশু শ্রমিক ও দুস্থ শিশুদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদানে ২০১৫ সালে অ্যাডভোকেট আরিফ-উল-হাসান আরিফ আমতলী শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমতলী পৌরসভার খোন্তাকাটা বেগম নুরজাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে বিকালে পাঠদান ও কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৬ সালে ওই বিদ্যালয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অনুমোদন হয়। ২০১৭ সালে খোন্তাকাটা বেগম নুরজাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ভেঙে যায়। এতে বিপাকে পড়ে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। নিরুপায় হয়ে চাওড়া কালীবাড়ী হাসানিয়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় জরাজীর্ণ ভবনে শিশুকল্যাণ স্কুলের পাঠদান ও কার্যক্রম শুরু করেন। গত তিন বছর ধরে ওই জরাজীর্ণ মাদ্রাসা ভবনে চলে আসছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের প্রভাবে ওই মাদ্রাসার টিনশেডের ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ওই ভবনে পাঠদান ও কার্যক্রম অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ। মহামারি করোনার পরে স্কুলের পাঠদান ওই জরাজীর্ণ ভবনে শুরু করে। গত শুক্রবার রাতে টিনশেডের মাদ্রাসা ঘরটি ভেঙে পড়ে। এতে বিপাকে পরে স্কুলশিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। নিরুপায় হয়ে শিক্ষকরা ভাঙ্গা ঘরের ভিটিতে গাছের নিচে বেঞ্চ বিছিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। রোববার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা গাছতলায় বেঞ্চ বিছিয়ে রোদে পুড়ে ক্লাস করছে। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সারা মনি বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। মাদ্রাসার যে ঘরে ক্লাস করতাম তাও ভেঙে পড়ায় এখন গাছতলায় বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণির তৃষা বলেন, মোগো স্কুলে ঘর নাই মোরা রোদে ক্লাস হরি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজিদা খানম জানান, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় এতদিন আমরা ধার করা মাদ্রাসা ঘরে ক্লাস করতাম। মাদরাসা ঘরটিও ভেঙে পরেছে। এখন নিরুপায় হয়ে গাছতলায় বসে রোদে পুরে শিশুদের ক্লাস করছি। বিদ্যালয়ের অভিভাবক হেলাল রাঢ়ী ও মাহিনুর বেগম বলেন, উপজেলার একমাত্র শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নেই। একটি মাদ্রাসার ঘরে ক্লাস করতো তাও ভেঙে পড়ায় এখন গাছ তলায় ক্লাস করতে গুরাগাড়ার ব্যামালা কষ্ট অইতে আছে। আমতলী শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট মো. আরিফ-উল-হাসান আরিফ বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষা বঞ্চিত ঝড়ে পড়া, অসহায়, শিশু শ্রমিক ও দুস্থ শিশুদের নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভবন নেই। এতদিন মাদ্রাসার ধার করা ঘরে ক্লাস নিতাম। মাদ্রাসা ঘরটিও ভেঙে পড়ায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছে। শিশুদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে এখানে একটি দ্রুত ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, শিশুকল্যাণ বিদ্যালয়টির জরুরি ভিত্তিতে ভবন প্রয়োজন। ভবন না থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত) দায়িত্ব ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. কাওসার হোসেন বলেন, দ্রুত ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।