মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্থান পেল হানাদার বাহিনীর হাতে নিহতদের হাড়

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩৩, অক্টোবর ১০ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কেতনার বিল বধ্যভূমিতে মাটি কাটতে গিয়ে পাওয়া ৫০ বছরের পুরনো মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহিদের দেহের হাড় জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার বিকালে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের কেতনার বিল গ্রামের মৃত দেবেন্দ্রনাথ পাত্রের স্ত্রী মায়া পাত্র গণহত্যা-নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদের দেহের হাড় খুলনা গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে দান করেন। এ সময় খুলনা গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুল হক ও গবেষক লুলু আর মারজান গণহত্যা-নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের দেহের হার গ্রহণ করেন। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। কেতনার বিলে গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য কেতনার বিলে যখন মানুষ যেতে ছিল তখন পাকসেনার শত শত মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছিল। এখনো বিভিন্ন সময় মাটি কাটতে গিয়ে প্রায়ই পাওয়া যায় মানুষের হাড়গুলো। বেশ কিছু দিন আগে ওই জমি থেকে মাটি আনতে গিয়ে ওই হাড়টি পান তারা। তারপর থেকেই তাদের কাছে রেখে দেন হাড়গুলো। তবে যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে বেশ কিছু হাড়। খুলনা গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-নির্যাতন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জানতে পারি ৫০ বছরের পুরনো মানব দেহের হাড়গুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত হয়। গণহত্যা-নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ এ হাড়টি জাদুঘরে আগৈলঝাড়ার কেতনার বিলের গণহত্যার নামেই সংরক্ষণ করা হবে এবং দাতা হিসেবে নাম থাকবে কেতনার বিল গ্রামের মৃত দেবেন্দ্রনাথ পাত্রের স্ত্রী মায়া পাত্রের। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৫ মে পাক হানাদার বাহিনী আসার খবরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর আশ্রয় নেয় রাজিহার ইউনিয়নের কেতনার বিলে। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে পাকসেনারা সেখানে পৌঁছে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে পাখির মতো গণহত্যা চলায় শত শত মানুষের ওপর। মুহূর্তের মধ্যেই কেতনার বিল পরিণত হয় লাশের স্তূপে। ওই সময় প্রাণ বাঁচাতে পালানো মানুষের ভিড়ে লাশ সৎকার বা কবর দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে কারণে বহু লাশ কেতনার বিলেই পচে গলে নষ্ট হয়।